ইঞ্জিনে পানি না ঘোরার সমস্যা ও থার্মোস্ট্যাটের ভূমিকা
ইঞ্জিনে পানি না ঘোরার সমস্যা ও থার্মোস্ট্যাটের ভূমিকা: ইঞ্জিনে পানি না ঘোরার প্রধান কারণ হলো থার্মোস্ট্যাটের ত্রুটি। এই ব্লগে জানুন ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হওয়ার কারণ, থার্মোস্ট্যাট কিভাবে কাজ করে, তা নিয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলাচনা করবো।
গাড়ির ইঞ্জিন একটি জটিল যন্ত্রাংশ, যা নিরবিচারে কাজ করার জন্য নির্ভর করে সুনির্দিষ্টভাবে সমন্বিত বিভিন্ন অংশের উপর। তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো থার্মোস্ট্যাট, যা ইঞ্জিনের কুলিং সিস্টেমের কার্যকারিতা নির্ধারণ করে। অনেক সময় চালকরা ইঞ্জিন গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হন এবং লক্ষ্য করেন যে রেডিয়েটরের পানি ঠিকভাবে সঞ্চালিত হচ্ছে না। এটি ইঞ্জিনে পানি না ঘোরার সমস্যা হিসেবে পরিচিত, যার পেছনে প্রধানত থার্মোস্ট্যাটের ভূমিকা রয়েছে।
থার্মোস্ট্যাট একটি তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রিত ভালভ, যা ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছালে খুলে যায় এবং রেডিয়েটরের মাধ্যমে পানি বা কুল্যান্ট সঞ্চালন করতে দেয়। এর উদ্দেশ্য হলো ইঞ্জিনকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে সাহায্য করা যাতে অতিরিক্ত গরম হওয়া বা ঠান্ডা থাকার কারণে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতায় বিঘ্ন না ঘটে।
থার্মোস্ট্যাটের কাজের প্রক্রিয়া:
আরও পড়ুন: গাড়ির ইঞ্জিন থার্মোস্ট্যাট সমস্যা
ইঞ্জিনে পানি সঠিকভাবে না ঘোরার ফলে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে, যা ইঞ্জিন ড্যামেজের অন্যতম প্রধান কারণ। নিচে এর প্রধান কারণগুলো দেওয়া হলো:
১. থার্মোস্ট্যাটের ত্রুটি: থার্মোস্ট্যাট যদি বন্ধ অবস্থায় আটকে যায়, তবে কুল্যান্ট ইঞ্জিন থেকে রেডিয়েটরে পৌঁছাতে পারে না। ফলে ইঞ্জিনে পানি ঘোরে না এবং অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়।
২. ওয়াটার পাম্পের সমস্যা: ওয়াটার পাম্পের কাজ হলো কুল্যান্ট সিস্টেমের মধ্য দিয়ে পানি সঞ্চালন নিশ্চিত করা। পাম্পের বেল্ট ছিঁড়ে গেলে বা ভিতরের ব্লেড ক্ষতিগ্রস্ত হলে কুল্যান্ট প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
৩. রেডিয়েটরের ব্লকেজ: রেডিয়েটরের ভেতরে জং বা ধুলা জমে গেলে পানি সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। ফলে কুল্যান্ট প্রবাহ ব্যাহত হয়।
৪. কুল্যান্ট লেভেল কমে যাওয়া: যদি রিজার্ভারে বা রেডিয়েটরে কুল্যান্টের পরিমাণ কম থাকে, তাহলে পানি ঘুরতে পারবে না এবং ইঞ্জিন দ্রুত গরম হবে।
৫. হোস পাইপ লিক বা ব্লক হওয়া: কুল্যান্ট প্রবাহের জন্য ব্যবহৃত পাইপে যদি ব্লক বা লিক থাকে, তাহলে পুরো সিস্টেম ভেঙে পড়ে।
ইঞ্জিনে পানি না ঘোরার সমস্যা বুঝতে হলে নিচের লক্ষণগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে:
১. ঠান্ডা ও গরম অবস্থার তুলনা করা: গাড়ি চালু রেখে কিছু সময় পরে হোস দু’টি পরীক্ষা করুন। যদি একটি গরম ও অন্যটি ঠান্ডা থাকে, তবে থার্মোস্ট্যাট ঠিকভাবে খুলছে না।
২. থার্মোস্ট্যাট খুলে পরীক্ষা করা: থার্মোস্ট্যাট খুলে ফুটন্ত পানিতে রেখে দেখা যায় এটি খুলছে কিনা। যদি না খোলে তবে এটি নষ্ট।
৩. ডায়াগনস্টিক টুল ব্যবহার করা: OBD স্ক্যানার দিয়ে ইঞ্জিনের তাপমাত্রা ও কুল্যান্ট ফ্লো ডেটা বিশ্লেষণ করা যায়।
আরও পড়ুন: গাড়ির কুলিং সিস্টেম
১. থার্মোস্ট্যাট পরিবর্তন: নষ্ট বা আটকে যাওয়া থার্মোস্ট্যাট দ্রুত প্রতিস্থাপন করা উচিত।
২. ওয়াটার পাম্প পরীক্ষা ও প্রতিস্থাপন: ওয়াটার পাম্প ঠিকঠাক কাজ করছে কি না তা পরীক্ষা করে প্রয়োজনে পরিবর্তন করুন।
৩. রেডিয়েটর ফ্লাশ করা: রেডিয়েটরের অভ্যন্তরীণ ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কুল্যান্ট flush করা প্রয়োজন।
৪. কুল্যান্ট সঠিক পরিমাণে ব্যবহার: নির্ধারিত পরিমাণে ও মানসম্পন্ন কুল্যান্ট ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।
৫. নিয়মিত মেইনটেন্যান্স: প্রতি ৬ মাসে কুলিং সিস্টেম চেকআপ ও কুল্যান্ট পরিবর্তন করা উচিত।
বাংলাদেশের আবহাওয়ার কারণে গাড়ির অতিরিক্ত গরম হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। তবে বেশিরভাগ চালক থার্মোস্ট্যাট সমস্যাকে উপেক্ষা করেন অথবা থার্মোস্ট্যাট খুলে চালানোর পরামর্শ নেন, যা দীর্ঘমেয়াদে ইঞ্জিনের ক্ষতি ডেকে আনে।
প্রশ্ন ১: থার্মোস্ট্যাট খুলে ফেলে দিলে কি সমস্যা হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, ইঞ্জিন সবসময় ঠান্ডা থাকবে বলে জ্বালানির খরচ বাড়বে এবং ইঞ্জিন ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হবে।
প্রশ্ন ২: কীভাবে বুঝব থার্মোস্ট্যাট কাজ করছে?
উত্তর: গাড়ি গরম হওয়ার পর উপরের ও নিচের হোসে একই তাপমাত্রা থাকলে বোঝা যায় থার্মোস্ট্যাট কাজ করছে।
প্রশ্ন ৩: থার্মোস্ট্যাট প্রতিস্থাপনের খরচ কত?
উত্তর: সাধারণত ৫০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়, তবে গাড়ির মডেল ও ব্র্যান্ড অনুযায়ী এটি ভিন্ন হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: কতদিন পর থার্মোস্ট্যাট পরিবর্তন করতে হয়?
উত্তর: গড়পড়তা ৮০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ কিলোমিটার পর বা ৪-৫ বছর পর চেক করা উচিত।
প্রশ্ন ৫: ওয়াটার পাম্প নষ্ট হলে কি থার্মোস্ট্যাট প্রভাবিত হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, কারণ ওয়াটার পাম্প কুল্যান্ট প্রবাহ নিশ্চিত করে, যা থার্মোস্ট্যাটের জন্য জরুরি।
ইঞ্জিনে পানি না ঘোরার সমস্যা কোনোভাবেই অবহেলা করার বিষয় নয়। এই সমস্যার মূল কারণ থার্মোস্ট্যাটের ত্রুটি হলেও, সম্পূর্ণ কুলিং সিস্টেমের উপর নজর দেওয়া জরুরি। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং সময়মতো সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান করলে গাড়ির ইঞ্জিন দীর্ঘদিন ভালো থাকবে এবং যাত্রাও নিরাপদ হবে।
আরও তথ্য পেতে আমাদের ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন: R.S Driving Training Center 2
কারে একাধিক এয়ার ব্যাগ থাকার উপকারিতা বর্তমান যুগে গাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক উন্নত…
বর্তমান যুগে নিরাপদ গাড়ি চলাচলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হচ্ছে এয়ার ব্যাগ। এটি যেকোনো গাড়ির দুর্ঘটনার…
গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া ঠেকাতে করণীয়: গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া একটি গুরুতর সমস্যা, যা এড়াতে…
গিয়ার বক্স কী ও কীভাবে কাজ করে, কত প্রকার, ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক গিয়ারের পার্থক্য এবং…
গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া প্রতিরোধে কোন কোন সতর্কতা জরুরি, ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ, চার্জিং নিয়ন্ত্রণ, এবং অন্যান্য…
বাংলাদেশে কারের জন্য সেরা এয়ার ব্যাগ ব্র্যান্ড, এই ব্লগে Autoliv, Takata, ZF TRW সহ শীর্ষ…