Car Accident

সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ড্রাইভারদের করণীয়

সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ড্রাইভারদের করণীয় 

সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দুঃখজনক ঘটনা। প্রতিদিন সারা বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে অসংখ্য জীবন হারিয়ে যায় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ আহত হয়। বাংলাদেশেও সড়ক দুর্ঘটনা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, দুর্ঘটনা এড়াতে ড্রাইভারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমরা আলোচনা করব কীভাবে ড্রাইভাররা সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।
সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ড্রাইভারদের করণীয়

ট্রাফিক আইন মেনে চলুন 

প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হল, ড্রাইভারদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা। ট্রাফিক সিগন্যাল, রুলস, স্পিড লিমিট, এবং পার্কিং নিয়মগুলো অনুসরণ করা দুর্ঘটনা কমানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি দ্রুত গতিতে গাড়ি চালান, তাহলে নিয়ন্ত্রণ হারানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

রাস্তায় সতর্কতা বজায় রাখুন 

ড্রাইভিংয়ের সময় সবসময় মনোযোগী থাকতে হবে। রাস্তার প্রতিটি অংশ এবং আশেপাশের পরিবেশের প্রতি সচেতন থাকতে হবে। সঠিক সময়ে সিগনাল দিতে হবে, লেন পরিবর্তন করতে হলে সিগনাল দিন, এবং অন্য গাড়ির গতিপথ বুঝে সতর্কভাবে চলুন। রাস্তার মধ্যবর্তী যেকোনো বিপদ থেকে সতর্ক থাকা এবং ফাঁকা রাস্তায় গতি নিয়ন্ত্রণ করা দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করে।

সিটবেল্ট পরিধান করুন 

গাড়ি চালানোর সময় সিটবেল্ট পরিধান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অভ্যাস। সিটবেল্ট না পরলে দুর্ঘটনায় আঘাতের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এটি আপনার জীবনের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ড্রাইভার এবং যাত্রীদের অবশ্যই সিটবেল্ট পরিধান করা উচিত, বিশেষত উচ্চ গতির সময়।

মুঠোফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন 

ড্রাইভিংয়ের সময় মুঠোফোন ব্যবহার করা একটি মারাত্মক ভুল। এটি ড্রাইভারের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায় এবং দুর্ঘটনা ঘটানোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন না ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার ফোনে কল বা মেসেজ আসলে, নিরাপদ স্থানে গাড়ি থামিয়ে সেগুলোর উত্তর দিন।

রাস্তায় চালানোর সময় তীব্র গতির থেকে বিরত থাকুন 

গতি না কমানোর ফলে নিয়ন্ত্রণ হারানো খুব সহজ হয়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখা যায় যখন ড্রাইভার অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালান। বিশেষত, দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে যদি সড়কটি খারাপ বা ভেজা থাকে। তাই গতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং রাস্তার পরিস্থিতি অনুযায়ী গতি ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি।

সতর্কতা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখুন 

ড্রাইভিংয়ের সময় সবসময় একটি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। একযোগভাবে সড়কে চলা, রাস্তার একপাশে চলা, এবং ধীরগতিতে গাড়ি চালানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক গাড়ির মধ্যে অপ্রয়োজনীয় পাল্লা বা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

সড়কের পরিবেশ বুঝে গাড়ি চালান

যেকোনো অবস্থাতেই ড্রাইভারদের সড়কের পরিবেশ বুঝে গাড়ি চালাতে হবে। বৃষ্টির সময় রাস্তায় পানি জমে যেতে পারে, যেটি স্লিপের কারণ হতে পারে। ধুলাবালির কারণে দৃষ্টি সমস্যা হতে পারে। রাতে গাড়ি চালানোর সময় রোড লাইটের অভাব হতে পারে। এই সব ক্ষেত্রে, সড়ক পরিস্থিতি বুঝে গতি কমিয়ে ও সতর্কভাবে গাড়ি চালাতে হবে।

টায়ার এবং ব্রেক চেক করুন 

গাড়ির টায়ার ও ব্রেক সঠিকভাবে কাজ না করলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। নিয়মিত সময়ে টায়ার এবং ব্রেক চেক করা, মডিফিকেশন বা রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। অবস্থা খারাপ হলে, এগুলোর পরিবর্তন করুন।

দীর্ঘ যাত্রায় বিরতি নিন 

যখন আপনি দীর্ঘ সময় গাড়ি চালাচ্ছেন, তখন মস্তিষ্ক এবং শরীরের ক্লান্তি আসতে পারে, যার কারণে মনোযোগ কমে যেতে পারে। তাই মাঝে মাঝে বিরতি নেয়া উচিত। এটি আপনার সতর্কতা বজায় রাখতে সহায়ক।

প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান অর্জন করুন 

ড্রাইভারদের প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু মৌলিক জ্ঞান থাকা উচিত। যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে দ্রুত প্রথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কিভাবে আহত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারেন, এবং কিভাবে সাহায্য চেয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে তা জানা দরকার।

আবহাওয়া পরিস্থিতি জানুন

বৃষ্টির দিন বা ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালানো আরো কঠিন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য আবহাওয়া পরিস্থিতি বুঝে গাড়ি চালানো উচিত। যদি আবহাওয়া খারাপ থাকে, তবে গতি কমিয়ে এবং আলোকিতভাবে গাড়ি চালাতে হবে।

উপসংহার

সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। সঠিকভাবে ট্রাফিক আইন অনুসরণ, মনোযোগী থাকা, সতর্ক গতি এবং গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক রেখে ড্রাইভিং করা আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি শুধুমাত্র ড্রাইভারের জন্য নয়, সড়কে চলাচলকারী সকলের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে। সুতরাং, সড়ক দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদে থাকতে হলে আমাদের সচেতনতা ও দায়িত্বপূর্ণ ড্রাইভিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
Author R.S Driving School 2

আর. এস ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার ২ || দক্ষ ড্রাইভার তৈরিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মোবাইলঃ ০১৬৭৫-৫৬৫ ২২২ অফিস ঠিকানাঃ হাউজ-১৫৪/এ, রোড-০২, ব্লক-এ, সেকশন-১২, পল্লবী মিরপুর ঢাকা-১২১৬।

View Comments

Recent Posts

নিরাপদ ড্রাইভিং বলতে কি বুঝায়? | Safe driving

নিরাপদ ড্রাইভিং বলতে কি বুঝায়? নিরাপদ ড্রাইভিং মানে শুধু গাড়ি চালানো নয়, এটি নিজের এবং…

1 month ago

শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার নিয়ম 2025 | Driving License

শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (Driving License) হলো নতুন চালকদের জন্য গাড়ি চালানোর অনুমতিপত্র, যা মূল ড্রাইভিং…

1 month ago

অল্প পুজিতে পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া | Wholesale Business Ideas

অল্প পুজিতে পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া Wholesale Business Ideas with Small Capital অল্প পুঁজিতে পাইকারি ব্যবসা…

2 months ago

উৎপাদনমুখী ব্যবসা ৫০০০ টাকায় || Manufacturing business

Manufacturing business উৎপাদনমুখী ব্যবসা ৫০০০ টাকায় শুরু করা এখন সহজ এবং লাভজনক!  মাত্র ৫০০০ টাকা…

2 months ago

অল্প পুঁজিতে ১০টি সেরা পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া | Low Investment Wholesale Business Ideas

অল্প পুঁজিতে ১০টি সেরা পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া। আপনি যদি কম পুঁজিতে একটি লাভজনক পাইকারি ব্যবসা…

2 months ago

সেহরির শেষ সময় কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?

সেহরির শেষ সময় কিভাবে নির্ধারণ করা হয়? সুবহে সাদিক, ফজরের আজান ও ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী…

2 months ago