ইঞ্জিন থার্মোস্ট্যাট খুলে দিলে কী সমস্যা হতে পারে
গাড়ির ইঞ্জিন থার্মোস্ট্যাট খুলে দিলে কী সমস্যা হতে পারে: তা জানুন বিস্তারিতভাবে। মাইলেজ কমে যাওয়া, পারফরম্যান্স কমে যাওয়া এবং ইঞ্জিন ক্ষতির কারণ এর সর্ম্পকে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
গাড়ির ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা নির্ভর করে তার বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সঠিক সমন্বয়ের ওপর। এর মধ্যে ইঞ্জিন থার্মোস্ট্যাট একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কুল্যান্ট প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক গাড়ি ব্যবহারকারী ভুলবশত বা লোকাল মেকানিকের পরামর্শে ইঞ্জিন থার্মোস্ট্যাট খুলে ফেলেন। কিন্তু এই কাজটি গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য হতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ।
থার্মোস্ট্যাট কী?
থার্মোস্ট্যাট হল একটি তাপ-সংবেদনশীল ভালভ যা ইঞ্জিনের কুলিং সিস্টেমে ইনস্টল থাকে। এটি ইঞ্জিনের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অনুযায়ী খোলে ও বন্ধ হয় এবং রেডিয়েটরে কুল্যান্ট পাঠানোর সময় নির্ধারণ করে।
কাজের প্রক্রিয়া
১. ইঞ্জিন যখন ঠান্ডা থাকে, তখন থার্মোস্ট্যাট বন্ধ থাকে এবং কুল্যান্ট রেডিয়েটরের দিকে যায় না, বরং ইঞ্জিনের মধ্যেই ঘুরতে থাকে।
২. তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছালে (সাধারণত ৮০–৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস), থার্মোস্ট্যাট খুলে যায় এবং গরম কুল্যান্ট রেডিয়েটরের দিকে যেতে থাকে।
৩. এভাবে ইঞ্জিন দ্রুত উত্তপ্ত হয় এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা তৈরি হলে তা কমাতেও সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: ইঞ্জিন থার্মোস্ট্যাট নষ্ট হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
অনেকেই মনে করেন থার্মোস্ট্যাট খুলে দিলে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হবে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি ইঞ্জিনের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। নিচে একে একে সম্ভাব্য সমস্যাগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:
১. ইঞ্জিন দ্রুত গরম হতে পারে না: থার্মোস্ট্যাট খুলে দিলে কুল্যান্ট সবসময় রেডিয়েটরের মাধ্যমে ঘোরে। ফলে ইঞ্জিনের তাপমাত্রা আদর্শ পর্যায়ে পৌঁছাতে সময় নেয়। এর ফলাফল হলো:
২. ইঞ্জিন ওভারকুল হতে পারে: যেহেতু কুল্যান্ট সবসময় রেডিয়েটরে ঘোরে, তাই ইঞ্জিন কখনোই পর্যাপ্ত উত্তপ্ত হয় না। এটি ইঞ্জিনের অভ্যন্তরের দহন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়।
৩. ইনজেকশন টাইমিং ও পারফরম্যান্সে সমস্যা: মডার্ন গাড়িতে ECU (Electronic Control Unit) ইঞ্জিনের তাপমাত্রা অনুসারে ফুয়েল ইনজেকশন টাইমিং নির্ধারণ করে। থার্মোস্ট্যাট না থাকলে ইঞ্জিন কখনো আদর্শ তাপমাত্রায় পৌঁছায় না, ফলে:
৪. কুলিং ফ্যান সারাক্ষণ চলতে থাকে: কারণ ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকলেও রেডিয়েটরে কুল্যান্ট চলতে থাকায় তাপমাত্রা বেশি না হলেও ফ্যান চালু হয় বারবার। এতে:
ব্যাটারির উপর চাপ পড়ে
ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমে সমস্যা হয়
অপ্রয়োজনীয় ফ্যান শব্দ হয় সবসময়
৫. ইঞ্জিন অয়েল ঘন থাকে দীর্ঘক্ষণ: ইঞ্জিন অয়েল আদর্শ তাপমাত্রায় পৌঁছাতে না পারলে সেটি ঘন থাকে এবং সঠিকভাবে লুব্রিকেশন দিতে পারে না, ফলে:
৬. ক্যাবিন হিটিং সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করে না: অনেক দেশে ঠান্ডা আবহাওয়ায় ক্যাবিন হিটার ব্যবহার করা হয়, যা ইঞ্জিন কুল্যান্টের তাপ ব্যবহার করে। থার্মোস্ট্যাট না থাকলে কুল্যান্ট যথেষ্ট গরম হয় না, ফলে:
বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যেমন:
তবে এইসবই অস্থায়ী সমাধান। দীর্ঘমেয়াদে থার্মোস্ট্যাট ছাড়া গাড়ি চালানো একদম উচিত নয়।
১. ইঞ্জিন তাপমাত্রা বেশি উঠছে বা নিচে থাকছে কি না দেখুন
২. রেডিয়েটর পাইপ ছুঁয়ে দেখুন গরম হচ্ছে কি না
৩. OBD স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রার ফ্লাকচুয়েশন দেখুন
৪. গাড়ি চলার কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্যান চালু হচ্ছে কি না লক্ষ করুন
আরো পড়ুন: ইঞ্জিন থার্মোস্ট্যাট খারাপ হলে কী লক্ষণ দেখা যায়
১. থার্মোস্ট্যাট খুলে দিলে মাইলেজ বাড়ে কি?
উত্তর: না, বরং মাইলেজ কমে যায়। ইঞ্জিন আদর্শ তাপমাত্রায় না থাকায় ফুয়েল সঠিকভাবে পোড়ে না।
২. গরম দেশে থার্মোস্ট্যাট দরকার হয় কি?
উত্তর: হ্যাঁ, গরম দেশে তাপমাত্রা বেশি হলেও ইঞ্জিনের দ্রুত গরম হওয়া, ইনজেকশন টাইমিং ও লুব্রিকেশন সঠিক রাখার জন্য থার্মোস্ট্যাট অত্যন্ত দরকার।
৩. থার্মোস্ট্যাট না থাকলে গাড়ি স্টার্ট নিতে সমস্যা হয়?
উত্তর: শীতকালে থার্মোস্ট্যাট না থাকলে ইঞ্জিন গরম হতে দেরি করে, ফলে স্টার্ট নিতে দেরি হতে পারে।
৪. থার্মোস্ট্যাটের দাম কত?
উত্তর: বাংলাদেশে থার্মোস্ট্যাটের দাম গাড়ি ভেদে ৫০০–২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
৫. থার্মোস্ট্যাট নিজে পরিবর্তন করা সম্ভব?
উত্তর: যদি আপনি প্রাথমিক কার রক্ষণাবেক্ষণের ধারণা রাখেন এবং সঠিক টুলস থাকে তবে এটি করা সম্ভব, কিন্তু নিরাপদভাবে একজন দক্ষ মেকানিকের কাছেই করানো ভালো।
ইঞ্জিন থার্মোস্ট্যাট খুলে দিলে কী সমস্যা হতে পারে খুলে দিলে তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা দেখা না গেলেও দীর্ঘমেয়াদে তা আপনার গাড়ির ইঞ্জিনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ইঞ্জিনের আদর্শ তাপমাত্রা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই কাজটিই করে একটি ছোট অথচ অত্যন্ত কার্যকর থার্মোস্ট্যাট। তাই মেকানিক বা অন্য কারোর পরামর্শে এই যন্ত্রাংশটি সরিয়ে ফেলা কখনোই উচিত নয়। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও সচেতনতা আপনার গাড়িকে রাখবে নিরাপদ, কর্মক্ষম এবং দীর্ঘস্থায়ী।
আরও তথ্য পেতে ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন: R.S Driving Training Center 2
কারে একাধিক এয়ার ব্যাগ থাকার উপকারিতা বর্তমান যুগে গাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক উন্নত…
বর্তমান যুগে নিরাপদ গাড়ি চলাচলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হচ্ছে এয়ার ব্যাগ। এটি যেকোনো গাড়ির দুর্ঘটনার…
গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া ঠেকাতে করণীয়: গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া একটি গুরুতর সমস্যা, যা এড়াতে…
গিয়ার বক্স কী ও কীভাবে কাজ করে, কত প্রকার, ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক গিয়ারের পার্থক্য এবং…
গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া প্রতিরোধে কোন কোন সতর্কতা জরুরি, ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ, চার্জিং নিয়ন্ত্রণ, এবং অন্যান্য…
বাংলাদেশে কারের জন্য সেরা এয়ার ব্যাগ ব্র্যান্ড, এই ব্লগে Autoliv, Takata, ZF TRW সহ শীর্ষ…