গাড়ির হিটার কাজ না করলে থার্মোস্ট্যাটের প্রভাব ও সমাধান
গাড়ির হিটার কাজ না করলে থার্মোস্ট্যাটের প্রভাব ও সমাধান, কেন এটি হয়, কীভাবে এটি নির্ণয় করবেন, এবং এর কার্যকর সমাধান কী হতে পারে। এছাড়াও, আমরা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর এবং ব্যবহারিক টিপস যুক্ত করবো, যা পাঠককে গাড়ির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশের মতো দেশে শীতকাল তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও, উত্তরের জেলা এবং পার্বত্য অঞ্চলে গাড়ির হিটার একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। হিটার গাড়ির কেবিনে গরম বাতাস সরবরাহ করে, যা চালক এবং যাত্রীদের আরাম দেয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, হিটার ঠিকমতো কাজ করছে না বা একেবারেই গরম বাতাস দিচ্ছে না। এই সমস্যার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, কিন্তু এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হল গাড়ির থার্মোস্ট্যাট।
আরও পড়ুন: থার্মোস্ট্যাটের কারণে গাড়ি স্টার্ট নিতে দেরি হওয়া
গাড়ির হিটার ঠিকমতো কাজ করার জন্য প্রয়োজন সঠিক তাপমাত্রার কুল্যান্ট। থার্মোস্ট্যাট যদি কাজ না করে, তাহলে কুল্যান্ট হয় খুব দ্রুত রেডিয়েটরে পৌঁছে যায়, অথবা ইঞ্জিন পর্যাপ্ত তাপ উৎপন্ন করতে পারে না। এর ফলে হিটারে পর্যাপ্ত গরম কুল্যান্ট পৌঁছায় না এবং কেবিনে ঠান্ডা বাতাস আসে।
থার্মোস্ট্যাট ব্যর্থ হলে যা হতে পারে:
গাড়ির থার্মোস্ট্যাট খারাপ হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
১. হিটার থেকে ঠান্ডা বাতাস আসা: যদি গাড়ির হিটার থেকে সবসময় ঠান্ডা বাতাস আসে, তাহলে থার্মোস্ট্যাট বন্ধ থাকা অবস্থায় আটকে থাকতে পারে। এতে কুল্যান্ট দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায় এবং হিটারে গরম তরল পৌঁছায় না।
২. ইঞ্জিন দীর্ঘ সময়ে গরম হওয়া: স্বাভাবিকভাবে ইঞ্জিন কিছুক্ষণের মধ্যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছে যায়। কিন্তু থার্মোস্ট্যাট খুলে থাকলে ইঞ্জিন গরম হতে অনেক বেশি সময় লাগে।
৩. তাপমাত্রা গেজ স্বাভাবিকের নিচে: ইঞ্জিনের তাপমাত্রা গেজ যদি সবসময় নিচের দিকে থাকে, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে ইঞ্জিন পর্যাপ্ত তাপমাত্রা অর্জন করছে না।
৪. ফুয়েল ইকোনমিতে অবনতি: ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকলে জ্বালানির পোড়ার কার্যকারিতা কমে যায়, যার ফলে ফুয়েল ইকোনমি কমে যেতে পারে।
১. দীর্ঘদিন ব্যবহারজনিত ক্ষয়: পুরনো থার্মোস্ট্যাটে স্কেল, মরিচা বা জমা হয়ে থাকা ডিপোজিটের কারণে এটি আটকে যেতে পারে।
২. নিম্নমানের কুল্যান্ট: খারাপ মানের কুল্যান্ট ব্যবহারে থার্মোস্ট্যাটের ভিতরে স্লাজ তৈরি হতে পারে, যা তার কার্যকারিতা নষ্ট করে।
৩. ওভারহিটিং: ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হলে থার্মোস্ট্যাটের সেন্সর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন: ডিজেল গাড়িতে থার্মোস্ট্যাট সমস্যা ও সমাধান
১. থার্মোস্ট্যাট পরীক্ষা করুন: গাড়ির তাপমাত্রা গেজ দেখুন। খুব দ্রুত ঠান্ডা বা অস্বাভাবিক ওঠানামা থাকলে থার্মোস্ট্যাট খুলে পরীক্ষা করুন।
২. পরিবর্তন করুন: থার্মোস্ট্যাট নষ্ট হলে সেটি প্রতিস্থাপন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বাংলাদেশে সাধারণত ৬০০–১৫০০ টাকার মধ্যে ভাল মানের থার্মোস্ট্যাট পাওয়া যায়।
৩. মানসম্পন্ন কুল্যান্ট ব্যবহার: সঠিক ফ্লাশিং ও উচ্চমানের কুল্যান্ট ব্যবহার করলে থার্মোস্ট্যাট অনেকদিন ভালো থাকে।
৪. রেগুলার রেডিয়েটর চেক: রেডিয়েটরে কোনো ব্লকেজ থাকলে থার্মোস্ট্যাটও সমস্যায় পড়ে। তাই নিয়মিত রেডিয়েটর পরিষ্কার করা জরুরি।
বাংলাদেশে বেশিরভাগ গাড়িই আমদানি করা পুরনো গাড়ি, যেগুলোর থার্মোস্ট্যাট অনেক পুরোনো ও ব্যবহারে জর্জরিত। অনেকে গাড়ির ওভারহিটিং থেকে রক্ষা পেতে থার্মোস্ট্যাট খুলে ফেলে দেন, যা গাড়ির হিটার সিস্টেমকে সম্পূর্ণ অকেজো করে তোলে। এটি মোটেও সঠিক পন্থা নয়।
এছাড়াও দেশের গরম আবহাওয়ার কারণে অনেকেই হিটারের ব্যবহার তেমন করেন না, ফলে এর সমস্যা তেমন চোখে পড়ে না। কিন্তু শীতকালে বা বর্ষায়, যখন কেবিন ফগি হয়ে যায়, তখন হিটারের প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায়। এই জন্য থার্মোস্ট্যাট নিয়মিত চেক করা উচিত।
পরামর্শ | ব্যাখ্যা |
---|---|
মাসে একবার হিটার চালান | যাতে সিস্টেম সচল থাকে |
কুল্যান্ট প্রতি ১ বছর পর পর বদলান | জমে থাকা স্লাজ দূর হয় |
থার্মোস্ট্যাট বদলানোর সময় ওরিজিনাল ব্যবহার করুন | চীনা নকল এড়িয়ে চলুন |
ওভারহিটিং হলে থার্মোস্ট্যাট চেক করুন | সেন্সর পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে |
ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকা অবস্থায়ই হিটার চালু করবেন না | এতে ব্লোয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে |
১. থার্মোস্ট্যাট খারাপ হলে হিটার কি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি থার্মোস্ট্যাট খারাপ হয়ে যায় এবং বন্ধ অবস্থায় আটকে থাকে, তাহলে হিটারে গরম কুল্যান্ট পৌঁছায় না এবং হিটার কার্যকর হয় না।
২. থার্মোস্ট্যাট না থাকলে গাড়ি চালানো নিরাপদ কি?
উত্তর: না। থার্মোস্ট্যাট ছাড়া ইঞ্জিন পর্যাপ্ত তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে না, যা জ্বালানির ক্ষতি করে এবং ইঞ্জিনের ক্ষয় বাড়ায়।
৩. কীভাবে বুঝবো থার্মোস্ট্যাট কাজ করছে কি না?
উত্তর: ইঞ্জিন চালু করে কিছুক্ষণ পর তাপমাত্রা গেজ চেক করুন। যদি তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করে, তবে এটি কাজ করছে।
৪. থার্মোস্ট্যাট পরিবর্তনের খরচ কত?
উত্তর: বাংলাদেশে গাড়ির মডেলভেদে থার্মোস্ট্যাট পরিবর্তনে খরচ পড়তে পারে ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত, মেকানিকের চার্জসহ।
৫. প্রতি কতদিন পর থার্মোস্ট্যাট চেক করা উচিত?
উত্তর: কমপক্ষে বছরে একবার থার্মোস্ট্যাট পরীক্ষা করানো উচিত, বিশেষ করে শীত শুরু হওয়ার আগে।
গাড়ির হিটার কাজ না করলে, অনেকেই সমস্যার উৎস হিসাবে ব্লোয়ার, কুল্যান্ট, বা হিটার কোরকে দায়ী করেন। কিন্তু বাস্তবে, এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে থার্মোস্ট্যাট। এটি ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং হিটারে কুল্যান্ট সরবরাহ নিশ্চিত করে। তাই থার্মোস্ট্যাট যদি ভালো অবস্থায় না থাকে, তাহলে গাড়ির হিটারও ঠিকমতো কাজ করবে না। নিয়মিত পরীক্ষা ও মানসম্পন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে আপনি এই সমস্যার সহজ সমাধান করতে পারেন।
আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো করুন: আর.এস. ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার- ২
গিয়ার বক্সের সাধারণ সমস্যা ও সহজ সমাধান, গিয়ার স্লিপ, গিয়ার পরিবর্তনে দেরি, গিয়ার লিক, গরম…
গিয়ার বক্স রক্ষণাবেক্ষণ ও তেল পরিবর্তনের সঠিক নিয়ম: গাড়ির গিয়ার বক্স দীর্ঘস্থায়ী ও মসৃণ চলাচলের…
অডোমিটারে গাড়ির আসল মাইলেজ বোঝার পদ্ধতি, আপনি কি গাড়ি কেনার আগে অডোমিটারের আসল মাইলেজ যাচাই…
গাড়ির গিয়ার বক্স পরিবর্তনের খরচ কত? এই আর্টিকেলে ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক গিয়ার বক্সের দাম, মেরামতের…
গাড়ির ইঞ্জিন ঠান্ডা না হওয়ার কারণ, থার্মোস্ট্যাট ত্রুটি। তাই গাড়ি চালকদের উচিত থার্মোস্ট্যাটের কাজ, সমস্যার…
গিয়ার বক্স কত প্রকার ও কী কী তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। ম্যানুয়াল, অটোমেটিক, সিভিটি,…