Automotive

ব্যবহৃত কার কেনার সময় এয়ার ব্যাগ চেক করবেন যেভাবে – সম্পূর্ণ গাইড

ব্যবহৃত কার কেনার সময় এয়ার ব্যাগ চেক করবেন যেভাবে, তা জানতে চান? এই পূর্ণাঙ্গ গাইডে রয়েছে সহজ ধাপে ধাপে নির্দেশনা, ভুল ধারণার খণ্ডন, বিস্তারিত জানবো।

ব্যবহৃত কার কেনার সময় এয়ার ব্যাগ চেক করবেন যেভাবে

ব্যবহৃত গাড়ি কেনা অনেকের জন্য একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত হতে পারে—বিশেষত যখন বাজেট সীমিত থাকে। তবে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা উচিত, যার মধ্যে অন্যতম হলো এয়ার ব্যাগের কার্যকারিতা। অনেক সময় ব্যবহৃত গাড়িতে দুর্ঘটনার ফলে এয়ার ব্যাগ খোলে, এবং পরে তা ঠিকমতো মেরামত না করেই গাড়িটি আবার বিক্রি করা হয়। এর ফলে নিরাপত্তার বড় ঝুঁকি দেখা দেয়। এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো কিভাবে আপনি ব্যবহৃত গাড়ি কেনার সময় এয়ার ব্যাগ সিস্টেম পরীক্ষা করবেন, কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন তা কাজ করছে কি না, কীভাবে সার্টিফাইড চেক করতে হয়, এবং একজন সাধারণ ক্রেতা হিসেবে কী ধরনের টুলস বা পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়।

এছাড়া এয়ার ব্যাগ সম্পর্কিত কিছু সাধারণ ভুল ধারণা, বাংলাদেশে এয়ার ব্যাগ চেকিংয়ের সুবিধা-অসুবিধা, এবং আপনার কেনা গাড়িতে ভবিষ্যতে এয়ার ব্যাগ ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করার নিয়মও আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো।

ব্যবহৃত কার কেনার সময় এয়ার ব্যাগ চেক করবেন যেভাবে

 

এয়ার ব্যাগ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

গাড়ির এয়ার ব্যাগ একটি প্যাসিভ সেফটি ফিচার যা দুর্ঘটনার সময় চালক ও যাত্রীদের রক্ষা করে। গাড়ির সামনের, পাশের বা কখনও কখনও জানালার পাশে ইনস্টল করা থাকে এয়ার ব্যাগ। একটি সংঘর্ষে সেন্সরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে এই এয়ার ব্যাগ ফুলে ওঠে এবং শরীরকে একটি কুশনের মতো সুরক্ষা প্রদান করে।

একটি সক্রিয় এয়ার ব্যাগ:

  • মাথা, ঘাড়, ও বুকের মারাত্মক আঘাত থেকে বাঁচায়
  • সিট বেল্টের সঙ্গে সমন্বয়ে আরও বেশি সুরক্ষা প্রদান করে
  • দুর্ঘটনার সময় মৃত্যু ও গুরুতর আহত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনে
  • তাই, ব্যবহৃত গাড়ি কিনতে যাওয়ার আগে এই সিস্টেমটি কাজ করছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক।

ব্যবহৃত গাড়িতে এয়ার ব্যাগ না থাকার ঝুঁকি

১. দুর্ঘটনার পর এয়ার ব্যাগ রিপ্লেস না করা: অনেক সময় পূর্বের মালিক দুর্ঘটনার পরে এয়ার ব্যাগ খুলে গেলে তা মেরামত না করেই গাড়ি বিক্রি করে দেন। এটা সাধারণত খরচ বাঁচানোর জন্য করা হয়, যা নতুন ক্রেতার জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে।

২. নকল বা ‘ডামি’ এয়ার ব্যাগ: কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সস্তায় এয়ার ব্যাগ প্রতিস্থাপন করেন বা পুরনো ঢাকনা লাগিয়ে দেয়, যাতে বাইরে থেকে দেখে মনে হয় এয়ার ব্যাগ আছে। কিন্তু ভেতরে কিছুই থাকে না।

৩. ড্যাশবোর্ডের পরিবর্তন বা সংস্কার: ড্যাশবোর্ড মেরামতের সময় অনেক সময় এয়ার ব্যাগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অথবা ভুলভাবে আবার সংযুক্ত করা হয়।

৪. এয়ার ব্যাগ কন্ট্রোল মডিউল বা সেন্সর নষ্ট: যদি সেন্সর বা কন্ট্রোল মডিউল ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে সংঘর্ষ হলেও এয়ার ব্যাগ খুলবে না।

আরও পড়ুন: কার এয়ার ব্যাগ দুর্ঘটনার সময় কিভাবে রক্ষা করে

ব্যবহৃত কার কেনার সময় এয়ার ব্যাগ চেক করবেন যেভাবে

১: গাড়ি চালু করে এয়ার ব্যাগ লাইট দেখুন: যখন গাড়ি চালু করবেন, তখন ড্যাশবোর্ডে SRS, AIRBAG বা Supplemental Restraint System লেখা লাইট জ্বলে উঠবে এবং কয়েক সেকেন্ড পরে নিভে যাবে। যদি এটি: জ্বলে থেকে যায় ,একেবারেই না, জ্বলে বারবার ঝিলমিল করে, তাহলে বুঝবেন সমস্যার সম্ভাবনা রয়েছে।

২: OBD2 স্ক্যানার ব্যবহার করুন: একটি OBD2 স্ক্যানার (On-Board Diagnostics) ব্যবহার করে আপনি এয়ার ব্যাগ সিস্টেমের ত্রুটি কোড পড়ে দেখতে পারেন। যদি B সিরিজ কোড আসে (যেমন B1234), বুঝবেন এয়ার ব্যাগ সংক্রান্ত কোনো ত্রুটি রয়েছে।

৩: গাড়ির সার্ভিস হিস্টোরি যাচাই করুন: ডিলার বা পূর্বের মালিকের কাছে থেকে গাড়ির পূর্ণ সার্ভিস রেকর্ড চেয়ে নিন। সেখানে যদি দেখা যায় বড় কোনো সংঘর্ষ হয়েছে এবং এয়ার ব্যাগ খুলেছে, তবে নিশ্চিত হোন সেটি পরে ঠিকমতো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে কি না।

৪: ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন করুন

  • স্টিয়ারিং হুইল ও ড্যাশবোর্ড ঢাকনা পরীক্ষা করুন। যদি অদ্ভুত ফাঁকফোকর থাকে বা অন্য রঙের অংশ বসানো থাকে, তাহলে সাবধান হোন।
  • সেলাই বা ঢালাই চিহ্ন থাকলে বুঝবেন আগের সংস্কার হয়েছে।
  • প্যাসেঞ্জার সাইডে এয়ার ব্যাগ লোগো সঠিকভাবে আছে কি না দেখুন।

৫. মেকানিক বা সার্টিফাইড ইন্সপেকশন করান: বিশ্বস্ত মেকানিক বা প্রফেশনাল ইন্সপেকশন সেন্টারে নিয়ে গাড়িটির এয়ার ব্যাগ সিস্টেম পরীক্ষা করান। তারা সেন্সর, মডিউল, ও কন্ট্রোল ইউনিটের কার্যকারিতা নিরীক্ষণ করবে।

বাংলাদেশে এয়ার ব্যাগ পরীক্ষা করানোর সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধা

  • কিছু সার্টিফাইড গ্যারেজ বা ইনস্পেকশন সেন্টার OBD টেস্টিং সরঞ্জাম দিয়ে পরীক্ষা করে।
  • অভিজ্ঞ মেকানিকরা চোখে দেখা ও স্পর্শের মাধ্যমে অনেক সমস্যা শনাক্ত করতে পারেন।
  • কিছু অনুমোদিত ডিলার এয়ার ব্যাগ সার্ভিস অফার করে।

অসুবিধা

  • অনেক লোক জানেই না কীভাবে এয়ার ব্যাগ চেক করতে হয়।
  • সাধারণ ওয়ার্কশপে পরীক্ষার সুযোগ নেই।
  • প্রতিস্থাপন বা মেরামত ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকেই এটি এড়িয়ে চলেন।

আরও পড়ুন: কার এয়ার ব্যাগ সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর

এয়ার ব্যাগ সংক্রান্ত প্রচলিত ভুল ধারণা

ভুল ধারণা বাস্তবতা
যদি লাইট নিভে যায়, তাহলে সব ঠিক আছে লাইট জালিয়াতি করে নিভিয়ে রাখা যেতে পারে
এয়ার ব্যাগ মেকানিকালি কাজ করে এটি ইলেকট্রনিক সেন্সর ও কন্ট্রোল মডিউলের উপর নির্ভর করে
পুরনো গাড়িতে এয়ার ব্যাগ অটো রিসেট হয় না, খোলা এয়ার ব্যাগ প্রতিস্থাপন করতে হয়
শুধু সামনের এয়ার ব্যাগ থাকলেই নিরাপদ সাইড এবং কার্টেন এয়ার ব্যাগও নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

ব্যবহৃত গাড়ির এয়ার ব্যাগ প্রতিস্থাপনের খরচ (বাংলাদেশ প্রসঙ্গ)

বাংলাদেশে গাড়ির ব্র্যান্ড, মডেল, ও এয়ার ব্যাগের ধরন অনুযায়ী খরচ ভিন্ন হয়:

এয়ার ব্যাগ প্রকার আনুমানিক খরচ (BDT)
স্টিয়ারিং হুইল এয়ার ব্যাগ ২০,০০০ – ৪০,০০০
প্যাসেঞ্জার সাইড এয়ার ব্যাগ ২৫,০০০ – ৫০,০০০
সাইড বা কার্টেন এয়ার ব্যাগ ৪০,০০০ – ৭০,০০০
কন্ট্রোল মডিউল/সেন্সর ১০,০০০ – ৩০,০০০

এছাড়াও মেকানিক্যাল চার্জ, স্ক্যানিং ফি এবং লেবার কস্ট যুক্ত হয়।

ব্যবহৃত কার কেনার সময় এয়ার ব্যাগ চেক করবেন যেভাবে

প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQ)

প্রশ্ন ১: আমি কীভাবে বুঝব গাড়ির এয়ার ব্যাগ খুলেছিল কি না?

উত্তর: গাড়ির সার্ভিস হিস্টোরি দেখে, স্টিয়ারিং বা ড্যাশবোর্ডে নতুন অংশ বা অদ্ভুত ফাঁক দেখে বোঝা যায়। এছাড়া স্ক্যানারে B সিরিজ ত্রুটি কোড থাকলে বুঝবেন খুলেছিল।

প্রশ্ন ২: এয়ার ব্যাগ না থাকলে আমি গাড়ি কিনবো কি?

উত্তর: না, না থাকলে সেই গাড়ি এড়িয়ে চলা উচিত। আপনার ও যাত্রীদের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন ৩: এয়ার ব্যাগ সিস্টেম ঠিক করতে কত খরচ হয়?

উত্তর: প্রকারভেদে ২০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে, যা গাড়ির মডেল ও ব্র্যান্ড অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।

প্রশ্ন ৪: এয়ার ব্যাগ চেক করার জন্য কি বিশেষ যন্ত্র লাগে?

উত্তর: হ্যাঁ, OBD2 স্ক্যানার দিয়ে চেক করা যায়, যা মেকানিক বা ইনস্পেকশন সেন্টারে সাধারণত থাকে।

প্রশ্ন ৫: বাংলাদেশে কোথায় এয়ার ব্যাগ পরীক্ষা করানো যায়?

উত্তর: ঢাকার কিছু আধুনিক গ্যারেজ, বিআরটিএ অনুমোদিত ইনস্পেকশন সেন্টার এবং ব্র্যান্ডেড সার্ভিস সেন্টারে চেক করানো যায়।

উপসংহার

ব্যবহৃত গাড়ি কেনার সময় শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য বা ইঞ্জিন নয়, নিরাপত্তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এয়ার ব্যাগ একটি জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা। তাই গাড়ি কেনার আগে যত্নসহকারে এয়ার ব্যাগ সিস্টেম চেক করুন। প্রয়োজনে পেশাদারদের সাহায্য নিন। সঠিক সিদ্ধান্ত আপনাকে ও আপনার পরিবারকে দুর্ঘটনার সময় প্রাণঘাতী আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক  পেজ ফলো  করুন: আর.এস. ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার- ২

Author R.S Driving School 2

আর. এস ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার ২ || দক্ষ ড্রাইভার তৈরিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মোবাইলঃ ০১৬৭৫-৫৬৫ ২২২ অফিস ঠিকানাঃ হাউজ-১৫৪/এ, রোড-০২, ব্লক-এ, সেকশন-১২, পল্লবী মিরপুর ঢাকা-১২১৬।

Recent Posts

কারে একাধিক এয়ার ব্যাগ থাকার উপকারিতা – নিরাপত্তার আধুনিক দিক ও কেন আপনার গাড়িতে এটি থাকা উচিত Best

কারে একাধিক এয়ার ব্যাগ থাকার উপকারিতা বর্তমান যুগে গাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক উন্নত…

18 hours ago

কার এয়ার ব্যাগ মেরামতের খরচ কত? | বিস্তারিত গাইড ২০২৫ Best tips

বর্তমান যুগে নিরাপদ গাড়ি চলাচলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হচ্ছে এয়ার ব্যাগ। এটি যেকোনো গাড়ির দুর্ঘটনার…

2 days ago

গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া ঠেকাতে করণীয় | Best Guide 2025

গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া ঠেকাতে করণীয়: গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া একটি গুরুতর সমস্যা, যা এড়াতে…

4 days ago

গিয়ার বক্স কী ও কীভাবে কাজ করে – বিস্তারিত ও সহজ ব্যাখ্যা ২০২৫ Best

গিয়ার বক্স কী ও কীভাবে কাজ করে, কত প্রকার, ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক গিয়ারের পার্থক্য এবং…

5 days ago

গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া প্রতিরোধে কোন কোন সতর্কতা জরুরি | গাড়ির ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ Best Guide

গাড়ির ব্যাটারি ফুলে যাওয়া প্রতিরোধে কোন কোন সতর্কতা জরুরি, ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ, চার্জিং নিয়ন্ত্রণ, এবং অন্যান্য…

6 days ago

বাংলাদেশে কারের জন্য সেরা এয়ার ব্যাগ ব্র্যান্ড / দাম, গুণমান ও পরামর্শ

বাংলাদেশে কারের জন্য সেরা এয়ার ব্যাগ ব্র্যান্ড, এই ব্লগে Autoliv, Takata, ZF TRW সহ শীর্ষ…

6 days ago