যে ১০টি জিনিস নতুন চালকদের অবশ্যই জানতে হবে যেগুলো সড়কে নিরাপদ ড্রাইভিং নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে গতি নিয়ন্ত্রণ, সব কিছুই বিস্তারিত জানুন।
যে ১০টি জিনিস নতুন চালকদের অবশ্যই জানতে হবে
নতুন চালক হিসেবে সড়কে গাড়ি চালানো শুরু করা আনন্দদায়ক হলেও অনেক দায়িত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দক্ষ চালক হতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জেনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। চলুন আজ আলোচনা করা যাক সেই ১০টি জিনিস নিয়ে, যা নতুন চালকদের অবশ্যই জানা উচিত।
১. ড্রাইভিং লাইসেন্স সবসময় সঙ্গে রাখুন
ড্রাইভিং লাইসেন্স হলো একজন চালকের পরিচয়ের বৈধ প্রমাণ। এটি ছাড়া সড়কে গাড়ি চালানো আইনত দণ্ডনীয়।
কেন এটি জরুরি?
- এটি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (BRTA) অনুমোদিত বৈধ ডকুমেন্ট।
- জরিমানা বা ট্রাফিক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ এড়ানো যায়।
- দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে লাইসেন্সের মাধ্যমে আপনার পরিচয় দ্রুত পাওয়া সম্ভব।
টিপস:
- ড্রাইভিং লাইসেন্সের পাশাপাশি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন এবং ইন্স্যুরেন্সের কাগজপত্রও সঙ্গে রাখুন।
- লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নবায়ন করুন।
- অনলাইনে লাইসেন্স যাচাই করার পদ্ধতি জেনে রাখুন।
২. সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে জানুন
সড়কে নিরাপদে চলাচলের জন্য সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে ধারণা থাকা নতুন চালকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন জানতে হবে?
- সঠিক আইন মেনে চললে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে।
- ট্রাফিক পুলিশের জরিমানা বা জটিলতার শিকার হওয়া থেকে বাঁচা যায়।
- সড়কের সকল চালক ও পথচারীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইন আপনার জানা উচিত:
- ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলা।
- ওভারটেক করার সময় নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলা।
- হেলমেট বা সিটবেল্ট ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।
৩. সিটবেল্ট বাধা অভ্যাস করুন
গাড়ি স্টার্ট করার আগে প্রথম কাজটি হওয়া উচিত সিটবেল্ট পরা। এটি ছোট একটি অভ্যাস হলেও আপনার জীবন রক্ষা করতে পারে।
সিটবেল্ট বাধার উপকারিতা:
- দুর্ঘটনার সময় আপনার শরীরকে গাড়ির ভেতরে নিরাপদ রাখে।
- সামনের দিকে ছিটকে পড়ার ঝুঁকি কমায়।
- এটি আইনের অধীন এবং বাধ্যতামূলক।
টিপস:
- পেছনের আসনের যাত্রীদেরও সিটবেল্ট বাধতে উৎসাহিত করুন।
- সিটবেল্টের লক ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
৪. গাড়ির নিয়মিত পরিচর্যা করুন
গাড়ি সঠিক অবস্থায় না থাকলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত গাড়ির পরিচর্যা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কী কী চেক করবেন?
- ইঞ্জিন অয়েল: ইঞ্জিন ভালো রাখতে অয়েল সঠিক মাত্রায় থাকা প্রয়োজন।
- ব্রেক সিস্টেম: ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
- টায়ারের অবস্থা: টায়ারের গায়ে ফাটল, ক্ষয় বা বায়ুর চাপ ঠিক আছে কিনা দেখুন।
টিপস:
- প্রতি মাসে একবার সার্ভিসিং সেন্টারে যান।
- গাড়ি চালানোর আগে হেডলাইট, ব্রেকলাইট এবং সিগন্যাল লাইট পরীক্ষা করুন।
৫. গতি নিয়ন্ত্রণে রাখুন
নতুন চালক হিসেবে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত গতির কারণে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
গতি নিয়ন্ত্রণের উপকারিতা:
- দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমায়।
- গাড়ির ব্রেক সিস্টেম ভালোভাবে কাজ করে।
- রাস্তায় অন্য গাড়ি ও পথচারীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
টিপস:
- সড়কে নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালাবেন না।
- রাতের বেলা বা খারাপ আবহাওয়ায় আরও ধীরগতিতে গাড়ি চালান।
আরও পড়ুন: নতুন ড্রাইভার হিসেবে আপনার যা করণীয়
৬. ড্রাইভিংয়ের সময় মনোযোগ দিন
ড্রাইভিংয়ের সময় যেকোনো কিছুতে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
মনোযোগী থাকার উপকারিতা:
- সড়কের অন্যান্য গাড়ি এবং পথচারীর গতিবিধি নজরে রাখা সহজ হয়।
- হঠাৎ কোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করা সম্ভব।
টিপস:
- মোবাইল ফোনে কথা বলা বা মেসেজ করার অভ্যাস পরিহার করুন।
- গাড়ি চালানোর সময় সঙ্গীর সঙ্গে অতিরিক্ত আলাপ-আলোচনা এড়ান।
৭. পার্কিংয়ের নিয়ম মেনে চলুন
পার্কিং নিয়ম না মানলে এটি শুধু আইন লঙ্ঘনই নয়, সড়কে অন্যদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পার্কিং সঠিকভাবে করার সুবিধা:
- জরিমানা থেকে বাঁচা যায়।
- রাস্তায় যানজট কমাতে সাহায্য করে।
টিপস:
- পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান ব্যবহার করুন।
- পার্কিং ব্রেক টানতে ভুলবেন না।
- গাড়ি পার্ক করার সময় অন্যান্য গাড়ির জন্য জায়গা ছাড়ুন।
৮. সঠিক ওভারটেকিং করুন
ওভারটেকিং একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, বিশেষত নতুন চালকদের জন্য।
ভুল ওভারটেকিংয়ের ঝুঁকি:
- অন্য গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনা।
- ট্রাফিক আইনের লঙ্ঘন।
টিপস:
- ডান পাশ দিয়ে ওভারটেক করুন।
- সাইড মিরর ও রিয়ার ভিউ মিরর ব্যবহার করে নিশ্চিত হয়ে নিন যে পথ খোলা আছে।
- ওভারটেক করার সময় হর্ন ব্যবহার করুন।
৯. আবহাওয়া অনুযায়ী ড্রাইভিং স্টাইল বদলান
বৃষ্টি, কুয়াশা বা তুষারপাতের মতো খারাপ আবহাওয়ায় গাড়ি চালানো আরও বেশি সতর্কতার দাবি করে।
কীভাবে মানিয়ে নেবেন?
- হেডলাইট অন রাখুন, বিশেষ করে কুয়াশার দিনে।
- গতি কমিয়ে চালান।
- রাস্তার চিহ্নগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখুন।
টিপস:
- গাড়ির ওয়াইপার ভালো অবস্থায় আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
- খারাপ আবহাওয়ার সময় দূরত্ব বজায় রেখে গাড়ি চালান।
১০. অন্য চালকদের প্রতি সহনশীল হোন
সড়কে সহনশীলতা একজন চালকের সবচেয়ে বড় গুণ।
সহনশীলতা কেন জরুরি?
- সড়কে ঝগড়া বা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়।
- ট্রাফিক সচেতনতা বাড়ে।
টিপস:
- অন্য চালকদের ভুল ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজাবেন না।
উপসংহার
নতুন চালকদের জন্য সবচেয়ে বড় পরামর্শ হলো ধৈর্য ধরে চালানো এবং নিয়ম মেনে চলা। এই ১০টি বিষয় মেনে চললে আপনি নিরাপদে গাড়ি চালাতে পারবেন এবং দক্ষ চালক হতে পারবেন।
আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না!