ইঞ্জিন ওভারহিট করলে গ্যাসকিট নষ্ট হয় কেন: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার”

ইঞ্জিন ওভারহিট করলে গ্যাসকিট নষ্ট হয় কেন? এই প্রশ্নটি অনেক গাড়িচালক ও মেকানিকদের কাছে পরিচিত। ইঞ্জিনের অতিরিক্ত তাপমাত্রা গ্যাসকিটের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে এবং এটি কেন নষ্ট হয়, তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।  আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কীভাবে ওভারহিটিং গ্যাসকিট নষ্ট করে, এর লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধের উপায়।

ইঞ্জিন ওভারহিট করলে গ্যাসকিট নষ্ট হয় কেন

• কুল্যান্টের অভাব বা লিকেজ: কুল্যান্টের পরিমাণ কমে গেলে ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়।
• থার্মোস্ট্যাটের ত্রুটি: থার্মোস্ট্যাট সঠিকভাবে কাজ না করলে কুল্যান্ট প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
• রেডিয়েটরের সমস্যা: রেডিয়েটর যদি ব্লক বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়।
• ওয়াটার পাম্পের ত্রুটি: ওয়াটার পাম্প যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে কুল্যান্ট সঞ্চালন ব্যাহত হয়।
• ফ্যানের সমস্যা: কুলিং ফ্যান যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে ইঞ্জিনের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

 

গ্যাসকিট কী এবং এর ভূমিকা

গ্যাসকিট ইঞ্জিন ব্লক এবং সিলিন্ডার হেডের মধ্যে একটি সিল হিসেবে কাজ করে। এর প্রধান কাজ হলো:

• কম্প্রেশন সিল করা: সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে কম্প্রেশন বজায় রাখা।
• তেল ও কুল্যান্টের পৃথক রাখা: তেল এবং কুল্যান্ট যেন মিশে না যায় তা নিশ্চিত করা।
• তাপমাত্রা সহ্য করা: উচ্চ তাপমাত্রায় সঠিকভাবে কাজ করা।

আরও পড়ুন: পুরনো কারে এয়ার ব্যাগ পরিবর্তন করা যায় কি না

ইঞ্জিন ওভারহিট করলে গ্যাসকিট নষ্ট হয় কেন?

ইঞ্জিন ওভারহিট করলে গ্যাসকিটের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা বিভিন্নভাবে গ্যাসকিট নষ্ট করতে পারে:

১. সিলিন্ডার হেডের বিকৃতি: অতিরিক্ত তাপে সিলিন্ডার হেড বিকৃত হতে পারে, ফলে গ্যাসকিটের সিল ঠিকভাবে বসে না। এতে গ্যাসকিট লিক করতে শুরু করে।

২. গ্যাসকিটের উপাদানের ক্ষয়: গ্যাসকিট সাধারণত ধাতু ও রাবারের মিশ্রণে তৈরি হয়। অতিরিক্ত তাপে এই উপাদানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং গ্যাসকিট ফেটে যেতে পারে।

৩. কুল্যান্ট ও তেলের মিশ্রণ: গ্যাসকিট নষ্ট হলে কুল্যান্ট এবং তেল মিশে যায়, যা ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে ক্ষতি করে। এটি ইঞ্জিনের অন্যান্য অংশেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

৪. কম্প্রেশন লস: গ্যাসকিট নষ্ট হলে সিলিন্ডারের কম্প্রেশন লস হয়, ফলে ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স কমে যায়।

গ্যাসকিট নষ্ট হওয়ার লক্ষণ

গ্যাসকিট নষ্ট হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়:

• সাদা ধোঁয়া: এক্সজস্ট পাইপ থেকে সাদা ধোঁয়া বের হওয়া।
• তেলের রঙ পরিবর্তন: তেল দুধের মতো সাদা হয়ে যাওয়া।
• ইঞ্জিন ওভারহিটিং: ইঞ্জিনের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়া।
• কুল্যান্টের লিক: কুল্যান্টের পরিমাণ কমে যাওয়া বা লিক হওয়া।
• ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স কমে যাওয়া: ইঞ্জিনের শক্তি কমে যাওয়া বা স্টার্ট নিতে সমস্যা হওয়া।

গ্যাসকিট নষ্ট হলে করণীয়

গ্যাসকিট নষ্ট হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত:

1. ইঞ্জিন বন্ধ করুন: ইঞ্জিন ওভারহিট করলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করুন।

2. মেকানিকের সাহায্য নিন: বিশেষজ্ঞ মেকানিকের সাহায্যে ইঞ্জিন পরীক্ষা করান।

3. গ্যাসকিট পরিবর্তন করুন: প্রয়োজনে গ্যাসকিট পরিবর্তন করুন।

4. কুলিং সিস্টেম পরীক্ষা করুন: কুলিং সিস্টেমের অন্যান্য অংশ যেমন রেডিয়েটর, ওয়াটার পাম্প, ফ্যান ইত্যাদি পরীক্ষা করুন।

আরও পড়ুন: গাড়ির কুলিং সিস্টেম কিভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

গ্যাসকিট নষ্ট হওয়া প্রতিরোধের উপায়

গ্যাসকিট নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করতে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত:

• নিয়মিত কুল্যান্ট পরীক্ষা করুন: কুল্যান্টের পরিমাণ ও মান নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
• ইঞ্জিনের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন: ইঞ্জিনের তাপমাত্রা গেজ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।
• নিয়মিত সার্ভিসিং করুন: গাড়ির নিয়মিত সার্ভিসিং করান।
• কুলিং সিস্টেমের অংশ পরীক্ষা করুন: রেডিয়েটর, ওয়াটার পাম্প, ফ্যান ইত্যাদি নিয়মিত পরীক্ষা করুন।

 

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

প্রশ্ন ১: গ্যাসকিট নষ্ট হলে কি ইঞ্জিন চালানো নিরাপদ?

উত্তর: না, গ্যাসকিট নষ্ট হলে ইঞ্জিন চালানো নিরাপদ নয়। এটি ইঞ্জিনের আরও ক্ষতি করতে পারে।

প্রশ্ন ২: গ্যাসকিট পরিবর্তনের খরচ কত?

উত্তর: গ্যাসকিট পরিবর্তনের খরচ গাড়ির মডেল ও সমস্যার উপর নির্ভর করে। সাধারণত এটি একটি ব্যয়বহুল মেরামত।

প্রশ্ন ৩: গ্যাসকিট নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ কী?

উত্তর: গ্যাসকিট নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ হলো ইঞ্জিন ওভারহিটিং।

প্রশ্ন ৪: কিভাবে বুঝব গ্যাসকিট নষ্ট হয়েছে?

উত্তর: সাদা ধোঁয়া, তেলের রঙ পরিবর্তন, ইঞ্জিন ওভারহিটিং ইত্যাদি লক্ষণ দেখে বোঝা যায়।

প্রশ্ন ৫: গ্যাসকিট নষ্ট হওয়া প্রতিরোধে কী করণীয়?

উত্তর: নিয়মিত কুল্যান্ট পরীক্ষা, ইঞ্জিনের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ এবং নিয়মিত সার্ভিসিং করানো উচিত।

উপসংহার

ইঞ্জিন ওভারহিট করলে গ্যাসকিট নষ্ট হওয়া একটি গুরুতর সমস্যা, যা ইঞ্জিনের অন্যান্য অংশেও ক্ষতি করতে পারে। তাই ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং কুলিং সিস্টেমের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পরীক্ষা ও যত্নের মাধ্যমে এই ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আরও তথ্য পেতে ফেসবুক  পেজ  ফলো  করুন: Ibrahim Driving School