থার্মোস্ট্যাটের কারণে গাড়ি স্টার্ট নিতে দেরি হওয়া? থার্মোস্ট্যাট হতে পারে মূল কারণ! এই পোস্টে জানুন থার্মোস্ট্যাট কী, এটি কীভাবে গাড়ির স্টার্টে প্রভাব ফেলে, এবং সহজ সমাধান।
থার্মোস্ট্যাটের কারণে গাড়ি স্টার্ট নিতে দেরি হওয়া
শীতকাল হোক বা বর্ষাকাল, আমাদের প্রিয় গাড়ি কখনো কখনো স্টার্ট নিতে চায় না। আপনি হয়তো ব্যস্ত সময়ে অফিসের জন্য দৌড়াচ্ছেন, কিন্তু গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না বা অনেক দেরিতে নিচ্ছে। এর পেছনে বহু কারণ থাকতে পারে, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং উপেক্ষিত কারণ হলো থার্মোস্ট্যাটের সমস্যা। এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো থার্মোস্ট্যাটের কারণে গাড়ি স্টার্ট নিতে দেরি হওয়া বিষয়টি নিয়ে।
থার্মোস্ট্যাট কী এবং এটি গাড়ির কোন কাজে ব্যবহৃত হয়?
থার্মোস্ট্যাট হলো একটি তাপমাত্রা-নিয়ন্ত্রক যন্ত্র যা গাড়ির ইঞ্জিনের কুলিং সিস্টেমের অংশ। এটি ইঞ্জিনের তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে রাখে এবং ইঞ্জিনকে দ্রুত ও কার্যকরভাবে গরম হতে সাহায্য করে। থার্মোস্ট্যাট গাড়ির কুল্যান্টের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, যা ইঞ্জিনের অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা করে।

থার্মোস্ট্যাট কীভাবে কাজ করে?
থার্মোস্ট্যাট একটি তাপ-সংবেদনশীল ভাল্ভ, যা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় খোলে ও বন্ধ হয়:
- ইঞ্জিন ঠান্ডা অবস্থায়: থার্মোস্ট্যাট বন্ধ থাকে এবং কুল্যান্ট রেডিয়েটরের দিকে যেতে পারে না। এতে ইঞ্জিন দ্রুত গরম হয়।
- ইঞ্জিন গরম হলে: থার্মোস্ট্যাট খোলে এবং কুল্যান্ট রেডিয়েটরের মধ্যে দিয়ে ঘুরে ইঞ্জিন ঠান্ডা করে।
থার্মোস্ট্যাটের কারণে গাড়ি স্টার্ট নিতে দেরি হওয়ার প্রধান কারণসমূহ
অনেক সময় আমরা ভাবি, ব্যাটারি বা স্টার্টার খারাপ হয়েছে। কিন্তু থার্মোস্ট্যাটের ছোট্ট একটি সমস্যা বড় রকমের দেরির কারণ হতে পারে।
১. থার্মোস্ট্যাট জ্যাম হয়ে গেলে: থার্মোস্ট্যাট যদি খোলার অবস্থায় আটকে যায়, তবে ইঞ্জিনের কুল্যান্ট সবসময় রেডিয়েটরের মধ্যে দিয়ে ঘোরে এবং ইঞ্জিন কখনোই যথাযথভাবে গরম হয় না। ফলে স্টার্ট নিতে দেরি হয়।
২. থার্মোস্ট্যাট বন্ধ হয়ে গেলে: যদি এটি বন্ধ অবস্থা থেকে না খোলে, তাহলে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ইঞ্জিনের তাপমাত্রা সেন্সর সমস্যায় পড়ে এবং ECU (Engine Control Unit) গাড়িকে স্টার্ট নিতে বাধা দেয়।
৩. ইনকনসিস্টেন্ট থার্মোস্ট্যাট ফাংশন: যদি থার্মোস্ট্যাট মাঝেমধ্যে কাজ করে আবার মাঝে মাঝে না করে, তাহলে ইঞ্জিনে অনিয়মিত তাপমাত্রা তৈরি হয়। এটি ইঞ্জিন পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে এবং স্টার্ট হতে দেরি করে।
আরও পড়ুন: পুরাতন গাড়িতে থার্মোস্ট্যাট লাগানো জরুরি কি না
গাড়ি স্টার্ট নিতে দেরি হওয়ার লক্ষণসমূহ
- সকালে ঠান্ডা অবস্থায় স্টার্ট নিতে বেশি সময় লাগে
- ইঞ্জিন চালু হওয়ার পরও তাপমাত্রা উঠতে অনেক সময় লাগে
- রেডিয়েটর ফ্যান প্রায়ই চলে
- গাড়ির হিটিং সিস্টেম কাজ করে না
- ইঞ্জিন তাপমাত্রা বারবার ওঠানামা করে
থার্মোস্ট্যাটের সমস্যার প্রভাব
- একটি ত্রুটিপূর্ণ থার্মোস্ট্যাটের কারণে শুধু স্টার্ট দেরি নয়, বরং আরও বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে:
- ইঞ্জিন ওভারহিট
- তেল খরচ বৃদ্ধি
- ইঞ্জিন পারফরম্যান্স কমে যাওয়া
- কুল্যান্ট লিক হওয়া
- রেডিয়েটর বা হিটার কোর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
থার্মোস্ট্যাট সমস্যা নির্ণয়ের উপায়
১. ইঞ্জিন তাপমাত্রা গেজ দেখা: গাড়ির ড্যাশবোর্ডে থাকা তাপমাত্রা গেজ যদি সবসময় কম বা বেশি দেখায়, তবে থার্মোস্ট্যাট সমস্যা থাকতে পারে।
২. OBD স্ক্যানার ব্যবহার: OBD-II স্ক্যানার ব্যবহার করে তাপমাত্রা সংক্রান্ত ত্রুটি কোড (যেমন P0128) বের করে থার্মোস্ট্যাটে সমস্যা বোঝা যায়।
৩. হ্যান্ড টেস্ট: ইঞ্জিন চালু করে কিছুক্ষণ পর রেডিয়েটর হোসে হাত রাখলে বুঝা যায় এটি গরম হচ্ছে কিনা।
থার্মোস্ট্যাটের কারণে সমস্যা হলে করণীয়
- থার্মোস্ট্যাট পরিবর্তন করুন: যদি নিশ্চিত হন থার্মোস্ট্যাটে সমস্যা হয়েছে, তবে এটি পরিবর্তন করাই উত্তম। এটি খুব ব্যয়বহুল নয় এবং একটি সস্তা যন্ত্র হলেও এর গুরুত্ব অনেক।
- ভালো মানের কুল্যান্ট ব্যবহার করুন: খারাপ বা পুরানো কুল্যান্ট থার্মোস্ট্যাট আটকে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
- রেগুলার মেইনটেন্যান্স: প্রতি ৬ মাস বা প্রতি সার্ভিসিং এর সময় থার্মোস্ট্যাট ও কুলিং সিস্টেম চেক করানো উচিত।
আরও পড়ুন: ইঞ্জিন থার্মোস্ট্যাট খারাপ হলে কী লক্ষণ দেখা যায়
থার্মোস্ট্যাট পরিবর্তনের খরচ বাংলাদেশে
বাংলাদেশে গাড়ির থার্মোস্ট্যাটের দাম সাধারণত ৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে হয়, গাড়ির ব্র্যান্ড ও মডেলের উপর নির্ভর করে। ইনস্টলেশনের খরচ আরও ৫০০-১০০০ টাকা হতে পারে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- গাড়ি স্টার্টে সমস্যা হলে সব সময় ব্যাটারিকে দোষ না দিয়ে থার্মোস্ট্যাট চেক করুন।
- মাঝে মাঝে গাড়ির হিটিং সিস্টেম বন্ধ থাকলে থার্মোস্ট্যাটে সমস্যা হতে পারে।
- পানি দিয়ে ইঞ্জিন ঠান্ডা করার চেষ্টা করবেন না, এতে থার্মোস্ট্যাট ক্র্যাশ করতে পারে।

FAQ (প্রশ্নোত্তর)
প্রশ্ন ১: গাড়ি ঠান্ডা অবস্থায় স্টার্ট নিতে দেরি করলে কি থার্মোস্ট্যাট দায়ী?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি থার্মোস্ট্যাট খোলা অবস্থায় আটকে থাকে, তাহলে ইঞ্জিন যথাযথভাবে গরম হতে পারে না, ফলে ঠান্ডা অবস্থায় স্টার্ট নিতে সমস্যা হয়।
প্রশ্ন ২: থার্মোস্ট্যাট সমস্যা কি চেক ইঞ্জিন লাইট অন করে?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি তাপমাত্রা স্বাভাবিক না থাকে, তাহলে ECU একটি ত্রুটি কোড জেনারেট করে এবং চেক ইঞ্জিন লাইট জ্বলে ওঠে।
প্রশ্ন ৩: থার্মোস্ট্যাট কতদিন পরপর পরিবর্তন করা উচিত?
উত্তর: গড়ে প্রতি ৫ বছর বা ৭০,০০০-১,০০,০০০ কিলোমিটার পর এটি পরিবর্তন করা ভালো।
প্রশ্ন ৪: থার্মোস্ট্যাট ছাড়াই কি গাড়ি চালানো যায়?
উত্তর: চালানো যায়, তবে এতে ইঞ্জিন পারফরম্যান্স কমে যাবে এবং জ্বালানি খরচ বেড়ে যাবে।
প্রশ্ন ৫: থার্মোস্ট্যাট প্রতিস্থাপন করা কি খুব জটিল কাজ?
উত্তর: না, একজন অভিজ্ঞ মেকানিক সহজেই এটি প্রতিস্থাপন করতে পারেন।
উপসংহার
গাড়ির স্টার্টিং সমস্যার পেছনে থার্মোস্ট্যাট একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। অনেকেই এই ছোট্ট যন্ত্রটিকে অবহেলা করেন, কিন্তু এটি গাড়ির ইঞ্জিন পারফরম্যান্স ও স্থায়িত্বের সাথে সরাসরি জড়িত। তাই সময়মতো থার্মোস্ট্যাট পরীক্ষা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে গাড়িকে সুস্থ রাখুন এবং স্টার্টিং সমস্যার সমাধান করুন সহজেই।
আরও তথ্য পেতে আমাদের ইউটিউব সাবস্ক্রাইব করুন: R.S Driving Training Center 2