দূরদর্শিতা কাকে বলে: What is foresight

দূরদর্শিতা কাকে বলে? এই গুণটি আমাদের জীবনে কিভাবে সফলতা অর্জন করতে সাহায্য করে তা জানুন। দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে উন্নতি সাধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি তুলে ধরা হয়েছে এই আর্টিকেলে।

দূরদর্শিতা কাকে বলে
দূরদর্শিতা কাকে বলে

 

দূরদর্শিতা কাকে বলে

দূরদর্শিতা (Vision) একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ যা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা জাতির সফলতা এবং উন্নতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি শুধুমাত্র ভবিষ্যতকে বুঝে চলা বা শুধু পরিকল্পনা করা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য স্থির করা এবং সেগুলো অর্জনের জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালানো। দূরদর্শী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সাধারনত ভবিষ্যতকে বুঝতে সক্ষম হয় এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই গুণটি সফলতা অর্জনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আসুন, বিস্তারিতভাবে জানি যে দূরদর্শিতা কাকে বলে এবং এটি আমাদের জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলে।

দূরদর্শিতা কাকে বলে?

দূরদর্শিতা বলতে ভবিষ্যতের দৃশ্য বা পরিস্থিতি বুঝে তার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়াকে বোঝানো হয়। এর মধ্যে কেবলমাত্র দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ নয়, বরং এগুলো অর্জন করার জন্য কাজের এক সুদৃঢ় পরিকল্পনাও থাকতে হয়। এটি মূলত মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা করার ক্ষমতা। যারা দূরদর্শী, তারা বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে কিভাবে ভবিষ্যতে সফলতা অর্জন করা সম্ভব, সে সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি রাখে।

আরও পড়ুন: কারিগরি দক্ষতা কি কি

দূরদর্শিতা কেন প্রয়োজন?

১. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা: দূরদর্শী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একদিকে যেমন তাদের স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য পূরণে মনোযোগী থাকে, তেমনি তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে দীর্ঘমেয়াদী। এভাবে তারা সময়ের সাথে সাথে তাদের লক্ষ্য পূরণ করার জন্য প্রস্তুত থাকে।

২. সফলতার জন্য প্রস্তুতি: ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, সমস্যা সমাধান এবং নতুন সুযোগের প্রতি মনোযোগী হওয়া একটি দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি। এটি তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে, যাতে তারা কোন ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা না করে।

৩. অভ্যন্তরীণ শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: দূরদর্শী হওয়ার ফলে মানুষের আত্মবিশ্বাস এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি পায়। তারা জানে যে, কোন উদ্দেশ্য অর্জন করতে তাদের একাধিক পথ অনুসরণ করতে হতে পারে, তবে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিকল্পনা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে।

দূরদর্শিতা কিভাবে অর্জন করা যায়?

দূরদর্শিতা অর্জনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে:

১. নিজের লক্ষ্য স্পষ্ট করা: প্রথমত, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনাকে আপনার জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য স্পষ্ট করতে হবে। লক্ষ্য যদি পরিস্কার না হয়, তবে দূরদর্শিতা অর্জন করা সম্ভব নয়। সুতরাং, নিজেকে জানুন এবং লক্ষ্য স্থির করুন।

২. বিগত অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন: আপনার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা, ভুল এবং সাফল্যগুলো থেকে শিখুন। আপনার অতীত আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে। আপনি যদি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারেন, তবে ভবিষ্যতে আপনি আরো ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

৩. সম্ভাব্য বিপদ ও সুযোগ বিশ্লেষণ করুন: দূরদর্শী হওয়ার জন্য আপনাকে ভবিষ্যতের বিপদ এবং সুযোগগুলো পূর্বাভাস করতে হবে। এটি আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে এবং ঝুঁকি কমাবে।

৪. মানসিক প্রস্তুতি ও ধৈর্য্য: দূরদর্শী হওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি এবং ধৈর্য্য প্রয়োজন। উন্নতি সাধন সহজ নয়, তাই ধৈর্য্য রেখে কষ্ট করতে হবে।

দূরদর্শিতা এবং নেতৃত্ব

দূরদর্শিতা নেতৃত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ। একজন নেতা যদি নিজের দলের জন্য সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে এবং তাদের নির্দেশনা দিতে সক্ষম হন, তাহলে দলটি একত্রে কাজ করতে এবং একই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা পাবে। একজন দূরদর্শী নেতা শুধুমাত্র বর্তমানে কি ঘটছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন না, বরং তিনি ভবিষ্যতের জন্যও পরিকল্পনা করেন এবং একটি সুদৃঢ় পথ তৈরি করেন।

আরও পড়ুন: পেশাগত দক্ষতা কাকে বলে

দূরদর্শিতার উদাহরণ

১. স্টিভ জবস: স্টিভ জবস ছিলেন একজন অন্যতম দূরদর্শী উদ্যোক্তা। তিনি শুধুমাত্র টেকনোলজির ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেননি, বরং ভবিষ্যতের প্রযুক্তির ধারণাও তৈরি করেছিলেন, যা আজকের প্রযুক্তি জগতকে বদলে দিয়েছে। তার দূরদর্শিতা এবং দক্ষ নেতৃত্বের কারণে আজও Apple একটি সফল কোম্পানি।

২. বিল গেটস: বিল গেটস, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, তার দূরদর্শিতার কারণে প্রযুক্তি জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তিনি জানতেন যে, ব্যক্তিগত কম্পিউটার ভবিষ্যতে মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং তার ভিশনের ফলে মাইক্রোসফট সফলতা লাভ করেছে।

দূরদর্শিতা ও ব্যবসা

ব্যবসায়ও দূরদর্শিতা গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভবিষ্যতের পরিকল্পনা থাকা খুবই জরুরি। একজন সফল ব্যবসায়ী কখনই শুধুমাত্র বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা নিয়েই চিন্তা করেন না, বরং তার দূরদর্শিতা তাকে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিপদ এবং সুযোগ সম্পর্কে সচেতন করে। ব্যবসায় দূরদর্শিতা না থাকলে, একটি প্রতিষ্ঠান অল্প সময়ের মধ্যে দেউলিয়া হতে পারে।

FAQ – দূরদর্শিতা কাকে বলে?

প্রশ্ন ১: দূরদর্শিতা কিভাবে অর্জন করা যায়?
উত্তর: দূরদর্শিতা অর্জন করতে হলে, প্রথমে নিজের লক্ষ্য স্পষ্ট করুন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন, ভবিষ্যতের বিপদ এবং সুযোগগুলো বিশ্লেষণ করুন, এবং ধৈর্য্য ধরে কাজ করুন।

প্রশ্ন ২: দূরদর্শী হওয়ার জন্য কি মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন?
উত্তর: হ্যাঁ, দূরদর্শী হওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি এবং ধৈর্য্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।

প্রশ্ন ৩: দূরদর্শিতা কি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনের জন্য প্রয়োজন?
উত্তর: না, এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবন নয়, বরং ব্যবসা, প্রতিষ্ঠান এবং জাতির উন্নতির জন্যও প্রয়োজনীয়।

প্রশ্ন ৪: দূরদর্শিতা কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে সফল করতে সাহায্য করে?
উত্তর: দূরদর্শী প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতের বিপদ এবং সুযোগের প্রতি সচেতন থাকে, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে এবং প্রতিষ্ঠানের সফলতা নিশ্চিত করে।

দূরদর্শিতা কাকে বলে
দূরদর্শিতা কাকে বলে

 

উপসংহার

দূরদর্শিতা শুধু ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর বিষয় নয়, বরং এটি সেই ভবিষ্যৎ তৈরি করারও একটি প্রক্রিয়া। এটি মানুষকে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করে এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করে। একজন সফল নেতা, উদ্যোক্তা বা ব্যক্তি তার দূরদর্শিতার মাধ্যমে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়। তাই, আমাদের জীবনে দূরদর্শিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি অর্জন করতে আমাদের সময় এবং প্রচেষ্টা বিনিয়োগ করা উচিত।

আর. এস ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার ২ || দক্ষ ড্রাইভার তৈরিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মোবাইলঃ ০১৬৭৫-৫৬৫ ২২২ অফিস ঠিকানাঃ হাউজ-১৫৪/এ, রোড-০২, ব্লক-এ, সেকশন-১২, পল্লবী মিরপুর ঢাকা-১২১৬।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment

01675565222