বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০ কৌশল: ঝুঁকি কমিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০ কৌশল, বর্ষার সময়ে বাইক চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই নিবন্ধে জানুন বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০ কার্যকর কৌশল যা আপনাকে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করবে এবং রাস্তায় নিরাপদ থাকার পরামর্শ দেবে।

বাংলাদেশের বর্ষাকালে বাইক চালানোর সময় বিশেষ সতর্কতা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ভেজা রাস্তা, পিচ্ছিল পথ এবং কম দৃশ্যমানতার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই লেখায় বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর জন্য ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। টায়ারের গ্রিপ নিশ্চিত করা, ব্রেক সিস্টেম পরীক্ষা, গতি নিয়ন্ত্রণ, হেলমেট এবং রেইন কিট ব্যবহার, কর্ণারিংয়ে সাবধানতা এবং বাইক পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি বিষয়গুলো আপনাকে নিরাপদে চলার পথে সহায়তা করবে। এই কৌশলগুলো মেনে চললে আপনি বর্ষাকালে দুর্ঘটনা এড়াতে পারবেন এবং বাইক চালানোর আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। বর্ষায় বাইক চালানোর নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য এই নিবন্ধটি আপনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড।

বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০ কৌশল

বাংলাদেশের মতো বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট ভিজে যায় এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে বাইকারদের জন্য এই সময়টা হতে পারে অনেক চ্যালেঞ্জিং। একটু অসতর্কতায় ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা। তাই বর্ষার দিনে বাইক চালাতে গেলে অবশ্যই কিছু বিশেষ কৌশল জানা জরুরি। চলুন জেনে নিই বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০টি কার্যকর কৌশল।

বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০ কৌশল
বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০ কৌশল

১. টায়ারের গ্রিপ নিশ্চিত করুন

বর্ষার মৌসুমে রাস্তাঘাট ভিজে থাকার কারণে টায়ারের গ্রিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাইকের টায়ার যদি পুরনো হয়ে যায় বা গ্রিপ কমে যায়, তাহলে ভেজা রাস্তায় ব্রেক করলেই পিছলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই বর্ষাকালের আগেই আপনার বাইকের টায়ার পরীক্ষা করুন। টায়ারে পর্যাপ্ত ট্রেড ডেপথ আছে কিনা দেখুন এবং টায়ার পুরনো হয়ে গেলে নতুন টায়ার লাগিয়ে নিন।

এছাড়া কিছু টায়ার আছে যেগুলো বিশেষভাবে ভেজা রাস্তায় চলার উপযোগী, যেমন রেইন টায়ার বা অল-ওয়েদার টায়ার। এগুলো ব্যবহার করলে বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানো অনেক সহজ হয়।

২. ব্রেক সিস্টেম ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করুন

ভেজা রাস্তায় ব্রেকিং সময় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত চাপ দিলে চাকা লক হয়ে যেতে পারে এবং বাইক স্লিপ করতে পারে। তাই আপনার বাইকের ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। ডিস্ক ব্রেক হলে সেটা ভালোভাবে পরিষ্কার রাখুন এবং ব্রেক প্যাডে যথেষ্ট গ্রিপ আছে কিনা দেখুন।

পেছনের ব্রেক ব্যবহার করার সময় অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে ধীরে চাপ দিন। সামনের ব্রেক বেশি ব্যবহার করার সময় ভারসাম্য বজায় রাখুন। ব্রেক ব্যবহার করার সময়, রাস্তার অবস্থান বুঝে চালানোই সবচেয়ে নিরাপদ কৌশল।

আরও পড়ুন: ৬ টি সহজ ধাপে মোটরসাইকেল চালানো শিখুন

৩. গতি নিয়ন্ত্রণে রাখুন

বৃষ্টির সময় বাইক চালানোর সময় গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষায় রাস্তায় হাইড্রোপ্ল্যানিংয়ের কারণে চাকা মাটি থেকে কিছুটা ভেসে যেতে পারে, যা খুব বিপজ্জনক। অতিরিক্ত গতি থাকলে বাইক নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে এবং দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি সাধারণ গতির তুলনায় অন্তত ২০-৩০% কম গতিতে বাইক চালান। এর ফলে আপনি হঠাৎ কোনো সমস্যা দেখা দিলে সময়মতো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারবেন। বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ক্ষেত্রে গতিনিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. হেডলাইট ও টেললাইট ব্যবহার করুন

বৃষ্টির সময় চারপাশে দৃশ্যমানতা অনেক কমে যায়। অনেক সময় বৃষ্টির কারণে চোখে কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না। এমন অবস্থায় অন্য যানবাহনের চালক যেন আপনাকে সহজে চিনতে পারে সেজন্য হেডলাইট ও টেললাইট জ্বালিয়ে রাখা খুবই জরুরি।

দিনের বেলাতেও হেডলাইট অন রাখলে দেখা যায় বাইকারদের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যদি আপনার বাইকে LED হেডলাইট থাকে, তাহলে সেটা আরও ভালো কারণ এটি উজ্জ্বল আলো দেয়। বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর জন্য সঠিকভাবে আলো ব্যবহার করা একটি অত্যন্ত কার্যকর কৌশল।

৫. প্রতিরোধক রেইন কিট ব্যবহার করুন

বর্ষার দিনে বাইক চালাতে গেলে ভিজে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু শরীর ভিজে গেলে ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও ভেজা জামাকাপড়ের কারণে মনোযোগ বিঘ্নিত হতে পারে। তাই একটি ভালো মানের রেইন কোট, রেইন প্যান্ট এবং ওয়াটারপ্রুফ গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত।

পলিথিন বা অস্থায়ী কিছু ব্যবহার না করে টেকসই ও মানসম্পন্ন রেইন কিট কিনে নেওয়াই ভালো। এটি কেবল আপনাকে ভেজা থেকে রক্ষা করবে না, বরং চালানোর সময় মনোযোগ বজায় রাখতেও সাহায্য করবে।

বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০ কৌশল
বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০ কৌশল

 

৬. রাস্তায় খেয়াল রেখে চালান

বর্ষাকালে অনেক রাস্তা কাদাযুক্ত, গর্তযুক্ত বা পানিতে ডুবে থাকে। ফলে অনেক সময় বোঝা যায় না কোথায় গর্ত বা পিচ্ছিল জায়গা আছে। এই কারণে বাইক সহজেই স্লিপ করতে পারে বা গর্তে পড়ে যেতে পারে। তাই বর্ষার সময় বাইক চালানোর সময় সবসময় সামনে ভালোভাবে খেয়াল রেখে চালান।

রাস্তায় যদি পানি জমে থাকে, সেই জায়গা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে ধীরে গিয়ে রাস্তার নিরাপদ পাশ দিয়ে চালান। আপনি যদি অনভিজ্ঞ বাইকার হন, তাহলে বেশি বিপদজনক রাস্তা এড়িয়ে চলাই উত্তম।

৭. হেলমেট ও পরিষ্কার ভিজার ব্যবহার করুন

বর্ষায় বাইক চালানোর সময় হেলমেট অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে এবং সেটি যেন সঠিক ভিজারসহ হয়। অনেক সময় বৃষ্টির ফোঁটা হেলমেটের ভিজারে লেগে দৃশ্য বাধাগ্রস্ত করে। তাই এমন হেলমেট ব্যবহার করুন যেটির ভিজার অ্যান্টি-ফগ ও ওয়াটার-রেজিস্ট্যান্ট।

বাজারে এখন এমন হেলমেট পাওয়া যায় যার ভিজার স্বচ্ছ থেকে যায় এমনকি বৃষ্টির মধ্যেও। আপনি চাইলে হেলমেটের ভিজারে অ্যান্টি-রেইন কোটিং স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন, যাতে পানি জমে না থাকে। এটি বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি।

৮. কর্ণারিংয়ের সময় সতর্ক থাকুন

ভেজা রাস্তায় বাইক চালানোর সময় কর্ণারিং করা অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়। বাইক যখন বাঁক নেয়, তখন বাইক ও রাস্তায় গ্রিপ অনেক কমে যায়। ফলে হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক স্লিপ করতে পারে। তাই কর্ণারিং করার সময় গতি আরও কমিয়ে আনুন এবং বাইককে যতটা সম্ভব সোজা রেখে চালানোর চেষ্টা করুন।

অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইক হেলানো বা আচমকা বাঁক নেওয়া এড়িয়ে চলুন। বর্ষার দিনে যতটা সম্ভব সরলভাবে বাইক চালান এবং বাঁক নিলেও ধীরে এবং নিয়ন্ত্রণ রেখে নিন।

৯. প্রতিদিন বাইক পরিষ্কার ও পরীক্ষা করুন

বৃষ্টির পানি, কাদা ও ধুলো বাইকের ইঞ্জিন, চেইন, ব্রেক ও অন্যান্য অংশে জমে গিয়ে বাইকের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই বর্ষাকালে প্রতিদিন বাইক চালানোর পর তা পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে চেইনে কাদা জমলে তা জ্যাম হয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও প্রতিদিন বাইকের লাইট, ব্রেক, ক্লাচ ও গিয়ার ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করুন। আপনি যদি প্রতিদিন কিছু সময় বের করে বাইক পরীক্ষা করেন, তাহলে বর্ষায় যেকোনো দুর্ঘটনা সহজেই এড়ানো সম্ভব।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির দিনে নিরাপদে মোটরসাইকেল চালানোর ৫টি কার্যকর টিপস 

১০. অতিরিক্ত ভার বহন করবেন না

বর্ষায় বাইক চালানোর সময় ভারসাম্য রক্ষা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাইকে যদি অতিরিক্ত যাত্রী বা মালপত্র বহন করা হয়, তাহলে ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে পেছনে অতিরিক্ত ওজন থাকলে বাইক চালাতে সমস্যা হয় এবং ভেজা রাস্তায় তা আরও বেশি বিপজ্জনক।

তাই বর্ষাকালে একা চালানোই সবচেয়ে নিরাপদ। যদি যাত্রী থাকেও, তাহলে অবশ্যই হেলমেট পরে এবং ভারসাম্য বজায় রেখে বসা উচিত। অতিরিক্ত পণ্য বা ব্যাগ বহনের সময় সেগুলো যেন বাইকের ভারসাম্যে সমস্যা না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০ কৌশল
বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর ১০ কৌশল

 

উপসংহার

বর্ষাকালে বাইক চালানো মানেই ঝুঁকি কিন্তু একদম বন্ধ করাও সবসময় সম্ভব নয়। তাই বর্ষায় নিরাপদে বাইক চালানোর জন্য উপরোক্ত ১০টি কৌশল মেনে চলা খুবই জরুরি। আপনি যদি এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করেন, তাহলে বর্ষার কাদা, পানি ও পিচ্ছিল রাস্তাও আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনবে না। নিরাপদে বাইক চালান, নিজে বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচান।

আর. এস ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার ২ || দক্ষ ড্রাইভার তৈরিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মোবাইলঃ ০১৬৭৫-৫৬৫ ২২২ অফিস ঠিকানাঃ হাউজ-১৫৪/এ, রোড-০২, ব্লক-এ, সেকশন-১২, পল্লবী মিরপুর ঢাকা-১২১৬।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment

01675565222