বৃষ্টির দিনে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের ৭ গুরুত্বপূর্ণ টিপস | বর্ষাকালে দুর্ঘটনা এড়ানোর কার্যকর উপায়

বৃষ্টির দিনে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের ৭ গুরুত্বপূর্ণ টিপস | বর্ষাকালে দুর্ঘটনা এড়ানোর কার্যকর উপায় এই আর্টিকেলে জানুন। বৃষ্টির দিনে গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সঠিক সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চালালে নিরাপদ রাখা সম্ভব। এই আর্টিকেলে  বৃষ্টির দিনে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের ৭ কার্যকর টিপস জানুন, যা আপনার যাত্রাকে নিরাপদ করবে।

বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে রাস্তা হয়ে যায় ভেজা ও পিচ্ছিল, যা গাড়ি চালকদের জন্য বিশেষত বিপজ্জনক। তাই বৃষ্টির দিনে ড্রাইভিংয়ের সময় বাড়তি সতর্কতা নেওয়া জরুরি। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি বৃষ্টির দিনে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস। যেমন—টায়ারের অবস্থা পরীক্ষা, হেডলাইট ও উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার ঠিক রাখা, ধীর গতি বজায় রাখা, ব্রেক ব্যবহারে সাবধান হওয়া, জমে থাকা পানির রাস্তা এড়িয়ে চলা, ডিফগার ব্যবহার, এবং অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানো এড়িয়ে চলা। এই সব নিয়ম মেনে চললে বর্ষাকালে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় এবং আপনি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। তাই বৃষ্টির দিনে গাড়ি চালানোর আগে এই টিপসগুলো মাথায় রাখুন এবং সুরক্ষিত ড্রাইভিং নিশ্চিত করুন।

বৃষ্টির দিনে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের ৭ গুরুত্বপূর্ণ টিপস

বাংলাদেশে বর্ষাকাল মানেই হচ্ছে নিয়মিত বৃষ্টি আর রাস্তার ভেজা পরিবেশ। এ সময় রাস্তাঘাট হয়ে পড়ে পিচ্ছিল, যানজট বেড়ে যায়, এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বাড়ে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত গাড়ি চালান, তাদের জন্য বৃষ্টির দিনে ড্রাইভিং করাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আজ আমরা আলোচনা করব বৃষ্টির দিনে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের ৭টি কার্যকর টিপস নিয়ে, যা আপনাকে ও অন্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

7 important tips for safe driving on rainy days
বৃষ্টির দিনে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের ৭ গুরুত্বপূর্ণ টিপস

 

১. গাড়ির টায়ারের চাপ ও অবস্থা ভালোভাবে পরীক্ষা করুন

বৃষ্টির দিনে গাড়ির টায়ারই হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় ভরসা। কারণ সড়ক ভেজা থাকার কারণে টায়ার যদি ভালো অবস্থায় না থাকে, তাহলে ব্রেক করলে গাড়ি স্লিপ করতে পারে। তাই বৃষ্টির মৌসুম শুরু হওয়ার আগে ও চলাকালীন সময়ে টায়ারের ট্রেড গভীরতা, ঘষা খাওয়া অংশ, এবং টায়ারে যথাযথ চাপ আছে কি না – তা ভালোভাবে পরীক্ষা করা জরুরি।

বৃষ্টির পানিতে রাস্তার ওপর একটি পাতলা পানির স্তর তৈরি হয়, যাকে বলে হাইড্রোপ্ল্যানিং। যদি টায়ারের গ্রিপ ভালো না থাকে, তবে এই পানি টায়ারের ও রাস্তার মাঝে ঢুকে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। টায়ারের ট্রেড গভীরতা কমপক্ষে ১.৬ মিমি হওয়া উচিত। নতুন টায়ার হলে এটি সাধারণত ৮ মিমি হয়, কিন্তু ব্যবহারের ফলে এটি কমে যায়। প্রতি সপ্তাহে একবার টায়ারের চাপ পরিমাপ করুন। কারণ অতিরিক্ত বা কম চাপ – উভয় অবস্থায়ই গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে বৃষ্টির মৌসুমে অল-ওয়েদার বা রেইন-স্পেশাল টায়ার ব্যবহার করুন।

২. উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার ও হেডলাইট ঠিক আছে কি না, তা নিশ্চিত করুন

বৃষ্টির সময় স্পষ্ট দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার ঠিকঠাক কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, ওয়াইপার ব্লেড পুরাতন হয়ে গেলে কাচ ভালোভাবে পরিষ্কার করে না, যার ফলে দৃষ্টি ব্যাহত হয়। তাই প্রতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ওয়াইপার পরীক্ষা করে প্রয়োজনে তা পরিবর্তন করুন।

একইসঙ্গে হেডলাইট, টেললাইট এবং ব্রেকলাইটগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা পরীক্ষা করুন। বৃষ্টির সময় আলো কমে যাওয়ায় হেডলাইট চালু রাখা খুবই জরুরি। এতে শুধু আপনি রাস্তা ভালোভাবে দেখতে পারবেন না, অন্য গাড়ির চালকরাও আপনাকে দেখতে পারবেন। যদি আপনার গাড়িতে রিয়ার ফগ লাইট বা ডিফগার সিস্টেম থাকে, তাহলে তা ব্যবহার করুন। ফগ লাইট কুয়াশা ও ভারী বৃষ্টির মধ্যে গাড়ির দৃশ্যমানতা বাড়াতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির দিনে নিরাপদে মোটরসাইকেল চালানোর ৫টি কার্যকর টিপস 

৩. ধীর গতিতে ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে গাড়ি চালান

বৃষ্টির দিনে ড্রাইভিংয়ের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো – ধীর গতিতে গাড়ি চালানো। পানি জমে থাকলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায় এবং ব্রেক করলে গাড়ি সহজেই স্লিপ করে যেতে পারে। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালালে আপনি গাড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

গাড়ির গতি সীমিত রাখার পাশাপাশি সামনে থাকা গাড়ির সাথে একটি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত শুষ্ক রাস্তায় ৩ সেকেন্ডের দূরত্ব যথেষ্ট হলেও, বৃষ্টির দিনে অন্তত ৫ সেকেন্ডের দূরত্ব রাখা উচিত। এটি আপনার প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য অতিরিক্ত সময় দেয়, যা দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন, বৃষ্টি হলে রাস্তার উপর তেল, ধুলা ও পানি মিলে একটি পিচ্ছিল স্তর তৈরি হয়, যা গাড়ির নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই কোনো অবস্থাতেই তাড়াহুড়ো করে চালানো উচিত নয়।

৪. ব্রেক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন

বৃষ্টির দিনে গাড়ি চালানোর সময় ব্রেক ব্যবহারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। হঠাৎ করে ব্রেক চাপা কখনই নিরাপদ নয়, বিশেষ করে যখন রাস্তা ভেজা থাকে। আকস্মিক ব্রেক চাপলে গাড়ি স্লিপ করে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

বুদ্ধিমানের কাজ হবে, গাড়ি চালানোর সময় আগেই গতি কমানো ও ব্রেক ধীরে ধীরে ব্যবহার করা। আপনি যদি দেখেন সামনে গাড়ি থামছে, তাহলে আগে থেকেই গতি কমিয়ে আস্তে আস্তে ব্রেক চাপুন। এতে গাড়ি থামানোর সময় বেশি পাওয়া যায় এবং নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। যাদের গাড়িতে ABS (Anti-lock Braking System) আছে, তারা কিছুটা নিরাপদ, কারণ এটি হুইল লক হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। তবে, তার পরেও ব্রেক ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

7 important tips for safe driving on rainy days
বৃষ্টির দিনে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের ৭ গুরুত্বপূর্ণ টিপস

 

৫. রাস্তার পাত্র, গর্ত ও জমে থাকা পানির মধ্যে দিয়ে গাড়ি না চালান

বৃষ্টির সময় রাস্তায় গর্ত ও পাত্রগুলো পানি দিয়ে ঢেকে যায়। আপনি বাইরের দিক থেকে বুঝতেও পারবেন না, কতটা গভীর সেই গর্ত বা কি ধরনের বাধা তার মধ্যে আছে। যদি আপনি সেই পানিতে গাড়ি চালান, তাহলে চাকা গর্তে পড়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি ইঞ্জিনেও পানি ঢুকে যেতে পারে।

এই কারণে বৃষ্টির সময় জমে থাকা পানির রাস্তা এড়িয়ে চলা সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। যদি সেই রাস্তা ছাড়া বিকল্প না থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে এবং সরাসরি সোজা পথে গাড়ি চালিয়ে পার হন। মনে রাখবেন, কখনোই পানির মধ্যে দ্রুত গতি বা হঠাৎ মোড় নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।পানি জমা রাস্তা দিয়ে চলার পর গাড়ির ব্রেক একটু ব্যবহার করে দেখুন ঠিকমতো কাজ করছে কি না। কারণ মাঝে মাঝে পানি ব্রেক প্যাডে চলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিতে পারে।

আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে নিরাপদে গাড়ি চালানোর ১০ কার্যকর কৌশল ও নিরাপত্তা টিপস

৬. ডিফগার বা AC ব্যবহার করে কাচের ভেতর থেকে ঘোলা ভাব দূর করুন

বৃষ্টির সময় গাড়ির ভিতরের অংশে কাঁচ ঘোলা হয়ে যায়, বিশেষ করে সামনে ও পিছনের উইন্ডশিল্ড। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এই সমস্যা সাধারণত গাড়ির ভিতরের তাপমাত্রা ও বাইরের ঠান্ডার পার্থক্যের কারণে হয়। এই ঘোলা ভাব দূর করতে হলে গাড়ির ডিফগার বা এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করা উচিত। অনেক গাড়িতে আলাদা ডিফগার অপশন থাকে, যেটি কাচের উপর বাতাস ছেড়ে ঘোলা ভাব দূর করে। যদি আপনার গাড়িতে এই সুবিধা না থাকে, তাহলে এয়ার কন্ডিশনার চালিয়ে ভেতরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। এছাড়া কিছু চালক কাচ মুছে ফেলার জন্য হাত ব্যবহার করেন, যা একেবারেই অনুচিত। এতে কাচে দাগ পড়ে যায় এবং পরিষ্কার দেখতেও সমস্যা হয়।

৭. অপ্রয়োজনে হর্ন না বাজিয়ে সংযত ড্রাইভিং বজায় রাখুন

বৃষ্টির সময় রাস্তায় যাত্রীরা, সাইকেল, রিকশা ও অন্যান্য গাড়ির উপস্থিতি বেশি থাকে। সেই সঙ্গে শব্দ দূষণও বেড়ে যায়। হর্ন বাজানো অবশ্যই প্রয়োজনীয়, তবে অপ্রয়োজনে তা ব্যবহার করলে অন্যদের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে।

বিশেষ করে যখন ট্রাফিক জ্যামে থাকেন, তখন বারবার হর্ন না বাজিয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই ভালো। কারণ অতিরিক্ত হর্ন শুধু যাত্রী নয়, চালককেও মানসিক চাপের মধ্যে ফেলতে পারে। এছাড়া, বৃষ্টির শব্দ ও রাস্তার যানবাহনের আওয়াজে অনেক সময় হর্ন শোনা যায় না। তাই যেখানে প্রয়োজন, সেখানে হেডলাইট ফ্ল্যাশ বা হালকা হর্ন দিয়ে সংকেত দিন।

FAQ: বৃষ্টির দিনে ড্রাইভিং নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন

১. বৃষ্টির সময় গাড়ির গতি কত হওয়া উচিত?
বৃষ্টির সময় গতি সর্বদা সীমিত রাখা উচিত, সাধারণত ৩০-৪০ কিমি/ঘণ্টা গতি নিরাপদ বলে বিবেচিত।

২. বৃষ্টির দিনে হেডলাইট চালানো কি বাধ্যতামূলক?
হ্যাঁ, হালকা বৃষ্টিতেও হেডলাইট চালানো উচিত যাতে সামনে-পেছনের গাড়ি সহজে দেখতে পায়।

৩. ভেজা রাস্তা কি ধরনের টায়ার ব্যবহার করা উচিত?
অল-ওয়েদার টায়ার বা রেইন স্পেশাল টায়ার ব্যবহার করলে সুরক্ষা অনেকটাই বাড়ে।

7 important tips for safe driving on rainy days
বৃষ্টির দিনে নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের ৭ গুরুত্বপূর্ণ টিপস

 

উপসংহার

বৃষ্টির দিনে গাড়ি চালানো যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সঠিক প্রস্তুতি ও সতর্কতা থাকলে আপনি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। উপরোক্ত ৭টি টিপস যদি আপনি অনুসরণ করেন, তবে বৃষ্টির দিনে ড্রাইভিং হবে আরও সহজ ও নিরাপদ।

আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো করুন: আর.এস. ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার- ২

আর. এস ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার ২ || দক্ষ ড্রাইভার তৈরিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মোবাইলঃ ০১৬৭৫-৫৬৫ ২২২ অফিস ঠিকানাঃ হাউজ-১৫৪/এ, রোড-০২, ব্লক-এ, সেকশন-১২, পল্লবী মিরপুর ঢাকা-১২১৬।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment

01675565222