রমজান মাসে যে ১৯টি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় । জানুন কীভাবে সেগুলি এড়িয়ে চলতে পারবেন। এই আর্টিকেলে রোজা ভঙ্গের বিস্তারিত কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে সহজ ও তথ্যবহুল আলোচনা করা হয়েছে। রোজা রাখার সময় সচেতন থাকুন এবং আপনার উপাসনা পূর্ণ রাখুন।

যে ১৯টি কারণে রোজা ভঙ্গ হয়
রমজান মাসে রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাসনা এবং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। রোজা ভঙ্গ হলে এর ফলস্বরূপ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তা অকার্যকর হয়ে যায়। সঠিকভাবে রোজা রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জানা এবং সেগুলি থেকে বিরত থাকা। এই আর্টিকেলে আমরা ১৯টি কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যার ফলে রোজা ভঙ্গ হতে পারে।

১. খাবার খাওয়া: রোজা অবস্থায় খাবার খাওয়া সবচেয়ে সাধারণ এবং স্পষ্টভাবে রোজা ভঙ্গের কারণ। রোজা ভঙ্গ হতে পারে যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে খাবার খান। রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নির্দেশ অনুসরণ করে খাওয়ার পরিধি নির্দিষ্ট করা এবং নিজের আত্মসংযমী শক্তি প্রদর্শন করা।
রোজা অবস্থায় সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার খাওয়ানো বা পান করা নিষিদ্ধ। এমনকি যদি কেউ খেয়ে ফেলেন বা ভুলে খাবার খেয়ে ফেলেন, তাও অবশ্যই তাদের তওবা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ভুলে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শাস্তি নেই, তবে মনে রাখতে হবে যে এটা অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
২. পানি পান করা: খাবারের মতোই, পানিও রোজা ভঙ্গের অন্যতম কারণ। রোজা অবস্থায় পানি পান করা নিষিদ্ধ। এ কারণে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পানীয় গ্রহণ করে, তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে, যদি কেউ ভুলে পান করেন, তবে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে, পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।
৩. শারীরিক সম্পর্ক: রোজা রাখার সময় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। মুসলিম পুরুষ ও মহিলাদের জন্য রোজার মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, তাদের রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং এজন্য শাস্তি প্রদান করা হয়।
যেহেতু রোজা ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই শারীরিক সম্পর্ক একে ভঙ্গ করে এবং এটি রোজার গ্রহণযোগ্যতা হারায়।
৪. বমি করা: বিভিন্ন কারণে রোজা ভঙ্গ হতে পারে, তার মধ্যে বমি করা অন্যতম। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে, যদি কেউ অসুস্থ হয়ে গিয়ে বমি করে এবং সেটা অজান্তে ঘটে, তবে তার রোজা ভঙ্গ হবে না।
৫. রক্তদান: রক্ত দেওয়া বা রক্ত নেওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে। রোজা অবস্থায় রক্ত দেওয়ার ফলে শরীরে পরিবর্তন ঘটে, যা রোজার কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই রোজার মধ্যে রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
আরও পড়ুন: মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য
৬. ইনজেকশন নেওয়া: ইনজেকশন বা কোনো ধরনের ঔষধ শরীরের মধ্যে প্রবাহিত হলে, এটি রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে। ইনজেকশন শরীরে প্রবাহিত ঔষধের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ হতে পারে, যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, যদি ইনজেকশন পুষ্টি বা শক্তি না প্রদান করে, তবে তা রোজাকে প্রভাবিত করবে না।
৭. সিগারেট বা তামাক সেবন: যতটা সাবধান থাকা উচিত, রোজা অবস্থায় সিগারেট বা তামাক সেবন করা অনেক বড় একটি ভুল হতে পারে। সিগারেট বা তামাক সেবন করার ফলে শরীরের ভেতরে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান প্রবাহিত হয়, যা রোজা ভঙ্গ করতে পারে। তাই রোজা রাখার সময় তামাক সেবন বা সিগারেট থেকে বিরত থাকা উচিত।
৮. মস্তিষ্কে কিছু প্রবাহিত হওয়া (অজ্ঞান হওয়া): রোজা ভঙ্গ হতে পারে যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং অজ্ঞান হয়ে যায় বা এমন কিছু ঘটে যা শরীরের ভিতরে প্রবাহিত হয়। যদি কোনো ব্যক্তি মস্তিষ্কে কিছু প্রবাহিত করার কারণে অজ্ঞান হয়ে যান, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৯. স্নান বা গোসলের সময়: রোজা অবস্থায় স্নান করা বা গোসল করা যথেষ্ট সচেতনতার বিষয়। যদি আপনি অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করেন বা স্নান করার সময় শরীরের ভিতরে পানি প্রবাহিত হয়, তবে তা রোজা ভঙ্গ করতে পারে। তবে স্নান করার সময় সাধারণ পানির ব্যবহার যদি শরীরে প্রবাহিত না হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না।
১০. ভ্রূণ বের হওয়া: যদি একজন মহিলা প্রসব করেন বা সন্তান বের হয়, তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এটি শরীরের বাইরে কিছু বের হওয়ার কারণে ঘটে। প্রসবের সময় শরীরের পরিবর্তন এবং বের হয়ে যাওয়া রোজাকে বাতিল করে দেয়।
১১. মনের কাজ (অশ্লীল চিন্তা): রোজা অবস্থায় অশ্লীল বা নিষিদ্ধ চিন্তা করা রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে। যদিও এটি শরীরের কোনো পরিবর্তন ঘটায় না, তবে মনের অশুদ্ধ চিন্তা করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের চিন্তা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।
১২. চোখের মাধ্যমে কিছু গ্রহণ করা: যদি চোখের মাধ্যমে কোন ঔষধ বা তরল প্রবাহিত হয়, যেমন চোখের ড্রপ ব্যবহার করা, তবে এটি রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে। অতএব, চোখের মাধ্যমে কোনো কিছু প্রবাহিত করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
১৩. মিষ্টান্ন বা কনফেকশনারী খাবার গ্রহণ করা: রোজা অবস্থায় মিষ্টান্ন বা কনফেকশনারী খাবার গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হতে পারে। এসব খাবারের উপাদান বা সুগার শরীরে প্রবাহিত হয়, যা রোজাকে বাতিল করে দেয়।
১৪. ধূমপান: ধূমপান রোজা ভঙ্গের অন্যতম কারণ। সিগারেট বা অন্য কোন তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করলে রোজা ভঙ্গ হবে। এটি শরীরের ভিতরে নিকোটিনের প্রবাহ ঘটায়, যা রোজার উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে।
১৫. গরম পানি ব্যবহার করে স্নান: গরম পানিতে স্নান করার ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবং এর ফলে রোজা ভঙ্গ হতে পারে। এমনকি যদি শরীরের মধ্যে পানি প্রবাহিত হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে।
১৬. হারবাল বা কেমিক্যাল সলিউশন ব্যবহার: কোন ধরনের হারবাল বা কেমিক্যাল সলিউশন যদি শরীরে প্রবাহিত হয়, তবে এটি রোজা ভঙ্গ করতে পারে। যেমন, মুখে বা ত্বকে কোনো ঔষধ ব্যবহার করা, যা শরীরের মধ্যে প্রবাহিত হয়, তা রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: যে আমলে জান্নাত পাওয়া যায়
১৭. ভুলে কিছু খাওয়া বা পান করা রোজা অবস্থায় ভুলে খাবার খেলে, সেটা রোজা ভঙ্গের কারণ হয়ে যাবে। তবে, যদি কেউ ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তবে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। এতে তাকে শুধু আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।
১৮. অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস: রোজা অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে কোনো মেডিকেল সলিউশন নেওয়া বা ইনহেলার ব্যবহার করা, যা শ্বাসনালীতে প্রবাহিত হয়, তা রোজা ভঙ্গ করতে পারে।
১৯. কিছু গ্যাজেট বা ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার: রোজা ভঙ্গের কারণ ১৯টি কিছু গ্যাজেট, যেমন হুকা বা ধোঁয়া উৎপাদনকারী ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করেও রোজা ভঙ্গ হতে পারে। এগুলি শরীরের ভিতরে ক্ষতিকর উপাদান প্রবাহিত করতে পারে, যার ফলে রোজা ভঙ্গ হবে।
রোজা ভঙ্গের ১৫ কারণ
যদিও আমরা রোজা ভঙ্গের ১৯টি কারন সম্পকে এখানে স্পষ্ট ভাবে আলোচনা করেছি। তবে অনেক ইসলামিক স্কলারদের মতে রোজা ভঙ্গের ১৫ কারণ বলে উল্লেখ্য করেছেন। আমাদের কোন তথ্যে ভুল থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এছাড়াও কোথাও কোন তথ্য পরিবর্তন অথবা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে অবশ্যই জানাবেন। আমরা তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবো। রোজা ভাঙ্গার ১৫ কারন সম্পর্কে আরও জানুন।যা সময় নিউজ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ মাসে।

উপসংহার
রোজা আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব এবং এটি শুধু খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা নয়, বরং আত্মসংযম, ধৈর্য এবং আত্মিক উন্নতির পথ। যে ১৯টি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এই কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে, আপনি রোজা রাখার সময় সচেতন থাকতে পারবেন এবং এর শর্ত পূরণ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ওয়াক্ত শুরু ও শেষ সময় মিরপুর ঢাকা