সস্তা কারে কি এয়ার ব্যাগ থাকে?
আজকের দিনে নিরাপদ যাত্রা সকল চালক ও যাত্রীদের প্রথম অগ্রাধিকার। গাড়ি কেনার সময় মানুষ মূলত দামের দিকে বেশি নজর দেয়, বিশেষ করে যখন বাজেট সীমিত থাকে। এই প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে: সস্তা কারে কি এয়ার ব্যাগ থাকে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের জানতে হবে এয়ার ব্যাগ কী, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি আদৌ সস্তা গাড়িগুলোর সঙ্গে পাওয়া যায় কিনা। এই ব্লগে আমরা সেই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করব। পাশাপাশি বাংলাদেশে সস্তা গাড়ির বাজার, নির্মাতাদের কৌশল, সরকারী নিয়মনীতি এবং ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা নিয়েও আলোচনা করা হবে।

এয়ার ব্যাগ কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এয়ার ব্যাগের সংজ্ঞা: এয়ার ব্যাগ একটি নিরাপত্তা ডিভাইস যা গাড়ি দুর্ঘটনার সময় মুহূর্তের মধ্যে ফোলানো হয় এবং চালক বা যাত্রীকে গাড়ির শক্ত অংশের সাথে ধাক্কা খাওয়া থেকে রক্ষা করে।
কিভাবে কাজ করে?: গাড়ির সেন্সর দুর্ঘটনার ধাক্কা শনাক্ত করলে তাৎক্ষণিকভাবে একটি গ্যাস তৈরি করে যা এয়ার ব্যাগকে ফোলায়। এই পুরো প্রক্রিয়া ঘটে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে।
এয়ার ব্যাগ না থাকলে কী হয়?
- গুরুতর মাথার আঘাত
- বুক ও মুখে চোট
- গাড়ির স্টিয়ারিং বা ড্যাশবোর্ডে সরাসরি ধাক্কা
- মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে
সস্তা গাড়ির সংজ্ঞা ও বর্তমান বাজার
সস্তা গাড়ি বলতে কী বোঝায়?: বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সাধারণত ৮-১২ লাখ টাকার মধ্যে যে গাড়িগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোকে ‘সস্তা গাড়ি’ বলা হয়ে থাকে। এই গাড়িগুলো সাধারণত ছোট সাইজের, ১০০০-১৫০০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতা বিশিষ্ট এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী।
বাংলাদেশের সস্তা গাড়ির বাজার: বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত গাড়ির একটি বড় অংশ জাপান থেকে রিকন্ডিশনড হয়ে আসে। কিছু ব্র্যান্ড যেমন:
- Toyota (Vitz, Corolla Axio)
- Nissan (March, Sunny)
- Honda (Fit, Grace)
- এছাড়া ভারতের Tata, Maruti Suzuki-র নতুন ছোট গাড়িগুলোও জনপ্রিয়।
সস্তা গাড়িতে এয়ার ব্যাগ: বাস্তবতা ও পর্যালোচনা
১. নতুন সস্তা গাড়িতে কি এয়ার ব্যাগ থাকে?
বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব নতুন কম দামের গাড়ি পাওয়া যায়, যেমন:
-
Suzuki Alto (নতুন): এতে সাধারণত ডুয়াল ফ্রন্ট এয়ার ব্যাগ থাকে।
-
Tata Tiago: এতে থাকছে ডুয়াল এয়ার ব্যাগ।
-
Daihatsu Mira (রিকন্ডিশনড): বেশিরভাগ মডেলেই ড্রাইভার ও প্যাসেঞ্জার এয়ার ব্যাগ থাকে।
অর্থাৎ, নতুন বা রিকন্ডিশনড অনেক সস্তা গাড়িতেই বর্তমানে অন্তত একটি বা দুটি এয়ার ব্যাগ থাকা শুরু হয়েছে।
২. পুরনো সস্তা গাড়িতে কি থাকে?: বেশিরভাগ পুরনো গাড়ি, বিশেষ করে ২০০৫ সালের পূর্বের মডেলগুলিতে এয়ার ব্যাগ অনুপস্থিত। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে যেমন:
-
Toyota Corolla (X সিরিজ)
-
Nissan AD Van (বিশেষ কিছু মডেল)
৩. রিকন্ডিশনড গাড়ির ক্ষেত্রে: জাপান থেকে আসা রিকন্ডিশনড গাড়িতে সাধারণত মূল গাড়ির নিরাপত্তা ফিচার বজায় থাকে। তবে অনেক সময় বাংলাদেশে এনে দাম কমাতে গিয়ে এয়ার ব্যাগ বা অন্যান্য ফিচার খুলে ফেলা হয়।
বাংলাদেশে এয়ার ব্যাগ সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালা
- বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (BRTA) এর অবস্থান: BRTA বর্তমানে গাড়ির সেফটি ফিচার বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে কাজ করছে, তবে এখনও আইনগতভাবে সস্তা গাড়িতে এয়ার ব্যাগ থাকা বাধ্যতামূলক নয়।
- ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এয়ার ব্যাগসহ নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া গাড়ি নিবন্ধন কঠিন হবে।
আরও পড়ুন: পুরনো কারে এয়ার ব্যাগ পরিবর্তন করা যায় কি না
নির্মাতাদের দৃষ্টিভঙ্গি
কেন নির্মাতারা সস্তা গাড়িতে এয়ার ব্যাগ দেয় না?
-
মূল্য কম রাখতে গিয়ে নিরাপত্তা ফিচার বাদ দেওয়া হয়
-
ক্রেতাদের চাহিদা নিরাপত্তা নয়, বরং দাম ও জ্বালানি সাশ্রয়
-
প্রযুক্তিগত জটিলতা ও খরচ বেড়ে যায়
বর্তমান ট্রেন্ড
- বর্তমানে অনেক নির্মাতা বাজেটের মধ্যেও এয়ার ব্যাগ অন্তর্ভুক্ত করছে কারণ:
- আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা
- ক্রেতাদের সচেতনতা বৃদ্ধি
- সরকারের চাপ

বাংলাদেশি ক্রেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি
- সচেতনতার অভাব: বেশিরভাগ মানুষ এয়ার ব্যাগ সম্পর্কে জানে না বা এর গুরুত্ব বুঝে না। তারা বলে, গাড়ি তো ভালো চলে, এয়ার ব্যাগ না থাকলেও চলবে।
- মূল্যকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত: অনেকেই বলে, ১০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে এয়ার ব্যাগ কেন? বরং এলইডি লাইট লাগাই। এর ফলে নির্মাতারা গুরুত্ব কম দেয়।
- ধীরে ধীরে পরিবর্তন: বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম গাড়ি কেনার সময় নিরাপত্তা ফিচারের দিকে নজর দিচ্ছে। ফলে বাজারে পরিবর্তন আসছে।
বিশ্ববাজারে সস্তা গাড়ি এবং এয়ার ব্যাগ
- ইউরোপ ও আমেরিকায়: সেখানে আইন অনুসারে গাড়িতে ড্রাইভার ও প্যাসেঞ্জার এয়ার ব্যাগ বাধ্যতামূলক। এমনকি সাইড এয়ার ব্যাগও থাকতে হয়।
- ভারতীয় প্রেক্ষাপট: ভারতে ২০২২ সাল থেকে সমস্ত নতুন গাড়িতে ডুয়াল এয়ার ব্যাগ বাধ্যতামূলক হয়েছে।
- বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি?: ধারণা করা যায়, আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশেও এই নিয়ম কার্যকর হবে।
সস্তা গাড়িতে এয়ার ব্যাগ না থাকলে কী সমস্যা হতে পারে?
- দুর্ঘটনার সময় গুরুতর চোট
- ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে
- আন্তর্জাতিক মান বজায় না থাকায় রিসেল ভ্যালু কমে যায়
- আত্মবিশ্বাসহীন ড্রাইভিং
এয়ার ব্যাগ চিহ্নিত করার উপায়
- Dashboard Indicator: গাড়ি চালু করলে যদি SRS Airbag লেখা দেখা যায়, তবে এয়ার ব্যাগ রয়েছে।
- Steering Wheel/Passenger Side: সেখানে AIRBAG বা SRS লেখা থাকলে বুঝতে পারবেন।
- গাড়ির ম্যানুয়াল বা VIN রিপোর্ট: এতে বিস্তারিত তথ্য থাকে।
সস্তা গাড়িতে এয়ার ব্যাগ যুক্ত করার উপায়
যদি আপনার গাড়িতে এয়ার ব্যাগ না থাকে, তবে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে এটি ইনস্টল করা সম্ভব:
-
অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দিয়ে ইনস্টল করা
-
মূল কোম্পানির পার্টস ব্যবহার
-
কমপক্ষে ডুয়াল এয়ার ব্যাগ যুক্ত করা
তবে এটি ব্যয়বহুল এবং প্রযুক্তিগতভাবে জটিল হওয়ায় বিশেষজ্ঞ পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
আরও পড়ুন: কার এয়ার ব্যাগ সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন ১: সব সস্তা গাড়িতে কি এখন এয়ার ব্যাগ থাকে?
উত্তর: না, এখনো সব সস্তা গাড়িতে এয়ার ব্যাগ থাকে না। তবে অনেক নতুন মডেলে এটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রশ্ন ২: পুরনো গাড়িতে কি এয়ার ব্যাগ বসানো যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে এটি ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৩: কিভাবে বুঝবো গাড়িতে এয়ার ব্যাগ আছে কিনা?
উত্তর: স্টিয়ারিং বা ড্যাশবোর্ডে SRS বা Airbag লেখা থাকে। এছাড়া ইগনিশন চালু করলে ইন্ডিকেটর লাইটও থাকে।
প্রশ্ন ৪: কোন সস্তা গাড়িতে ডুয়াল এয়ার ব্যাগ আছে?
উত্তর: Suzuki Alto (নতুন), Tata Tiago, Honda Fit (রিফারবিশড) ইত্যাদি গাড়িতে ডুয়াল এয়ার ব্যাগ থাকে।
প্রশ্ন ৫: বাংলাদেশে কি এয়ার ব্যাগ বাধ্যতামূলক?
উত্তর: এখনো বাধ্যতামূলক নয়, তবে ভবিষ্যতে আইন আসতে পারে।

উপসংহার
বর্তমান বিশ্বে নিরাপত্তা ছাড়া গাড়ি কল্পনা করা যায় না। যদিও এখনো বাংলাদেশে সব সস্তা গাড়িতে এয়ার ব্যাগ নেই, তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলেই আশা করা যায়। আমরা ক্রেতা হিসেবে যদি সচেতন হই এবং নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেই, তাহলে নির্মাতারাও বাধ্য হবে সস্তা গাড়িতে এয়ার ব্যাগ সংযুক্ত করতে।
আমাদের প্রতিষ্ঠানের লোকেশন: আর.এস. ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার 2