ঢাকা বোট ক্লাবের উত্থান পতন: ঢাকা বোট ক্লাব বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত একটি বিশিষ্ট সামাজিক ও বিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটি নৌবিহার ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য একটি জনপ্রিয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্লাবটি বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, অপরাধমূলক কার্যক্রম এবং বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা বোট ক্লাবের উত্থান পতন
ঢাকা বোট ক্লাব ২০১৪ সালে নৌবিহার প্রেমীদের জন্য একটি কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তুরাগ নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এই ক্লাবটি দ্রুতই ঢাকার অভিজাত সমাজের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সদস্যদের জন্য নৌবিহার, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক কার্যক্রমের আয়োজন করে ক্লাবটি স্বল্প সময়ের মধ্যেই একটি সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করে।

বিতর্ক ও অভিযোগ
ক্লাবটির উত্থানের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে এটি বিতর্ক ও অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সদস্য ফি বাবদ আদায় করা অর্থ সিএ রিপোর্টে ডোনেশন হিসেবে দেখিয়ে ১৫% ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ ওঠে। কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট (পশ্চিম) এর তদন্তে জানা যায়, ক্লাবটি মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন অনুযায়ী প্রায় ৩০ লাখ টাকার মূসক ফাঁকি দিয়েছে। এরপর জরিমানা ও সুদসহ মোট ৬৮ কোটি ১৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া, ক্লাবের জমি দখল সম্পর্কেও অভিযোগ রয়েছে। সাভার বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সুজন অভিযোগ করেন, বোট ক্লাব তার লিজ নেওয়া ৭৭ শতাংশ সরকারি জমি দখল করেছে। তিনি জানান, ক্লাবের এক সদস্য তাকে জমিটি ক্লাবের প্রয়োজন হবে বলে এ বিষয়ে কথা না বলার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: আরএফএল ড্রাইভার নিয়োগ ২০২৫
ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব পরিবর্তন
ক্লাবটির নেতৃত্বেও পরিবর্তন ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠার পর রুবেল আজিজ প্রথম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ সভাপতির দায়িত্ব নেন। তবে, দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করলে ২০২৩ সালের জুন মাসে তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর পুনরায় রুবেল আজিজ সভাপতির দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে নাসির উদ্দিন মাহমুদ সভাপতি নির্বাচিত হন।
অপরাধমূলক কার্যক্রম ও বিতর্কিত ঘটনা
২০২১ সালে ক্লাবটি একটি বিতর্কিত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমনি অভিযোগ করেন, তাকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করা হয়। এই অভিযোগে ক্লাবের নির্বাহী সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদ গ্রেপ্তার হন এবং পরে তাকে ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে, নাসির উদ্দিন এই অভিযোগ অস্বীকার করে পরীমনির বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেন।
ভবিষ্যৎ ও চ্যালেঞ্জ
বিভিন্ন বিতর্ক ও অভিযোগের পরও ঢাকা বোট ক্লাব তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, ক্লাবটির সুনাম ও স্থায়িত্ব বজায় রাখতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আইন মেনে চলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা জরুরি। নেতৃত্বের পরিবর্তন ও অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে ক্লাবটি তার সদস্যদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে।
আরও পড়ুন: সরকারি ড্রাইভার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫
উপসংহার
ঢাকা বোট ক্লাবের উত্থান-পতনের এই আখ্যানটি ক্ষমতা, অপরাধ ও বিতর্কের জটিল মিশ্রণ। একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও সুনাম বজায় রাখতে স্বচ্ছতা, নৈতিকতা এবং আইন মেনে চলার গুরুত্ব অপরিসীম। ভবিষ্যতে ক্লাবটি এই শিক্ষাগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটি ইতিবাচক ও সম্মানজনক অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।