পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে করণীয়: সহজ ও কার্যকর সমাধান

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে করণীয়: পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা দেখা দিলে কী করবেন? গিয়ার পরিবর্তনের সমস্যা থেকে শুরু করে তেল পরিবর্তন, ক্লাচ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কার্যকর উপায় জানুন এই বিস্তারিত গাইডে।

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্স সমস্যা অনেক সময় গাড়ির পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয় এবং চালককে কষ্ট দেয়। গিয়ার ঢোকানো কঠিন হওয়া, অস্বাভাবিক শব্দ, গিয়ার ফসকানো ইত্যাদি সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এই নিবন্ধে আপনি শিখবেন গিয়ার বক্সের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী কী, নিয়মিত তেল পরিবর্তন ও ক্লাচের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ কিভাবে করতে হয়, এবং সমস্যা শুরু হলে কীভাবে দ্রুত মেরামত বা রিফার্বিশিং করানো উচিত। এছাড়া অতিরিক্ত ওজন এড়ানো, গাড়ি চালানোর সময় সতর্কতা ও গিয়ার বক্সের সার্ভিসিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। গাড়ির গিয়ার বক্স সুস্থ রাখতে এই গাইডটি আপনার জন্য অপরিহার্য।

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে করণীয়

গাড়ির গিয়ার বক্স হল গাড়ির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা ইঞ্জিনের পাওয়ার সঠিকভাবে চাকা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। বিশেষ করে পুরনো গাড়িতে গিয়ার বক্সের সমস্যা অনেকটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সমস্যা সময় মতো সমাধান না করলে গাড়ির কর্মক্ষমতা খারাপ হয় এবং বড় ধরনের খরচও হতে পারে। তাই এই লেখায় আমরা জানবো, পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে কী কী ধাপ অনুসরণ করা উচিত এবং কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে করণীয়
পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে করণীয়

 

১. গিয়ার বক্সের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিনে নেওয়া

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা শুরু হলে প্রথমেই কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেগুলো থেকে বুঝা যায় গিয়ারে সমস্যা আছে। যেমন:

  • গাড়ি গিয়ার পরিবর্তনের সময় কষ্ট হওয়া বা গিয়ার লাগাতে সমস্যা হওয়া।
  • গিয়ার পরিবর্তনের সময় ক্লাচের সঙ্গে গাড়ির লেগে থাকা অনুভূত হওয়া।
  • গিয়ার পরিবর্তনের সময় অস্বাভাবিক শব্দ (ঝনঝন, ক্লাংকিং) শোনা।
  • গাড়ি চলার সময় গিয়ার ফসকানো বা গিয়ার ছেড়ে যাওয়া।
  • গাড়ির গিয়ার লিভার ঢিলে বা সঠিক স্থানে না থাকা।

এই লক্ষণগুলো লক্ষ্য করলে দ্রুত গাড়ির মেকানিক বা গাড়ির বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ গিয়ার বক্সে ছোটখাটো সমস্যা বড় মেশিন খারাপের কারণ হতে পারে।

২. গিয়ার বক্সের তেল নিয়মিত পরীক্ষা ও পরিবর্তন করা

গাড়ির গিয়ার বক্সের মধ্যে থাকা গিয়ার অয়েল বা তেলই গিয়ারগুলোর মসৃণ চলাচল এবং গিয়ার বক্সের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরনো গাড়িতে গিয়ার বক্সের তেল যথাসময়ে পরিবর্তন না করলে তেলের মান কমে যায় এবং এতে গিয়ার ঘর্ষণ বেশি হয়। ফলে গিয়ার বক্সে সমস্যা দেখা দেয়।

গিয়ার বক্সের তেল চেক করার জন্য গাড়ির ম্যানুয়াল অনুসরণ করুন এবং প্রয়োজনমতো যেকোনো অভিজ্ঞ মেকানিকের সাহায্য নিন। তেল যদি কালো বা গাড়ির গন্ধযুক্ত হয়, তবে তা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। তেলের স্তর নিয়মিত চেক করা এবং ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ কিলোমিটার অন্তর গিয়ার বক্সের তেল পরিবর্তন করাই উত্তম।

৩. গাড়ির ক্লাচ সঠিকভাবে কাজ করছে কি না নিশ্চিত করুন

গিয়ার বক্সের সমস্যা অনেক সময় ক্লাচের কারণে হয়। ক্লাচ ঠিকমতো কাজ না করলে গিয়ার পরিবর্তনের সময় গিয়ার ঢোকানো কঠিন হয়ে পড়ে। ক্লাচ পেডাল চাপলে গাড়ির গিয়ার বক্স থেকে পাওয়ার কাটতে হয়, কিন্তু যদি ক্লাচ স্লিপ করে বা পুরোপুরি কাজ না করে, তবে গিয়ার বক্সে চাপ পড়ে এবং সমস্যা হয়।

সুতরাং ক্লাচের অবস্থা নিয়মিত চেক করুন। ক্লাচের ফ্লুইড পর্যায়ক্রমে চেক এবং পরিবর্তন করতে হবে। যদি ক্লাচ পেডাল খুব নিচে বা খুব উপরে থাকে, বা গাড়ি চালানোর সময় ক্লাচের কোনো রকম অসুবিধা হয়, দ্রুত ক্লাচ সিস্টেম পরীক্ষা করান।

৪. গিয়ার বক্সের অংশ পরিবর্তন করা প্রয়োজন হলে তা দ্রুত করুন

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সের ভেতরের গিয়ার বা বেয়ারিং এর যে কোন অংশ ফাটা, ছেঁড়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে গিয়ার বক্স ঠিকমতো কাজ করে না। অনেক সময় গিয়ার বা বেয়ারিং এর ক্ষয়ক্ষতি ধীরে ধীরে গাড়ির পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয় এবং যন্ত্রাংশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গাড়ি মেকানিক যদি গিয়ার বক্সে যেকোনো ভাঙন বা রাবার বা সিলিন্ডারের সমস্যা দেখতে পান, তখন দ্রুত ওই অংশ পরিবর্তন বা মেরামত করা উচিত। সমস্যা গড়ে ওঠার আগেই নতুন পার্টস ব্যবহার করা গাড়ির আয়ুষ্কাল বাড়ায় এবং বড় ধরনের খরচ থেকে রক্ষা করে।

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে করণীয়
পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে করণীয়

৫. গাড়ির গিয়ার বক্স রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত সার্ভিস করানো

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্স দীর্ঘদিন ভালো রাখতে নিয়মিত সার্ভিস করানো জরুরি। গাড়ির গিয়ার বক্সে লুব্রিকেশন ঠিকমতো আছে কিনা, গিয়ার লিভারের কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা, তেলের সঠিক মান বজায় আছে কিনা — এসব পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

সার্ভিসের সময় গিয়ার বক্সে বিশেষ ধরণের ক্লিনিং করা যেতে পারে যাতে ভেতরের জমে থাকা ধুলো, ময়লা ও অপরিষ্কার তেল পরিষ্কার হয়। সার্ভিসের মাধ্যমে গিয়ার বক্সের ক্ষয় হওয়া অংশগুলি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

৬. অতিরিক্ত ওজন বা কষ্ট করে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকুন

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্স বেশি ওজন বা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে চালানো হলে গিয়ার বক্সের মেরামত খরচ অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে, গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী বা মালামাল পরিবহন করলে গিয়ার বক্সের উপর চাপ পড়ে।

সুতরাং গাড়ি চালানোর সময় গাড়ির ক্ষমতার বাইরে ওজন বা চাপ থেকে বিরত থাকুন। হঠাৎ করে গিয়ার পরিবর্তন করা এড়িয়ে চলুন, এবং গাড়ির গতি ও রাস্তার অবস্থা অনুযায়ী গিয়ার পরিবর্তন করুন।

৭. সমস্যা শুরু হলে গাড়ি চালানো কমিয়ে দিন

গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা শুরু হলে যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালানো কমিয়ে আনা উচিত। সমস্যা উপেক্ষা করলে গাড়ির অন্যান্য যন্ত্রাংশেও সমস্যা বাড়তে পারে। গিয়ার বক্সের সমস্যা গাড়ির ইঞ্জিন, ক্লাচ এবং ড্রাইভশাফটের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

সমস্যা শুরু হলে দ্রুত অভিজ্ঞ মেকানিকের পরামর্শ নিন এবং জরুরি না হলে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকুন।

আরও পড়ুন: গাড়ির যত্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণে ১০ টি কার্যকরী টিপস

৮. গিয়ার বক্স পরিবর্তনের বিকল্প হিসেবে রিফার্বিশিং করা

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্স যদি খুবই খারাপ অবস্থায় থাকে, তাহলে নতুন গিয়ার বক্স কেনার বিকল্প হিসেবে রিফার্বিশিং করা যেতে পারে। রিফার্বিশিং মানে হলো গিয়ার বক্সের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ গুলো মেরামত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা।

এটি অনেক সময়ে নতুন গিয়ার বক্স কেনার তুলনায় সাশ্রয়ী হয়। তবে রিফার্বিশিং কাজটি অবশ্যই দক্ষ ও বিশ্বস্ত গাড়ি মেকানিকের মাধ্যমে করানো উচিত যাতে গাড়ির পারফরম্যান্স ভালো থাকে।

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে করণীয়
পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে করণীয়

 

উপসংহার

পুরনো গাড়ির গিয়ার বক্সে সমস্যা হলে দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। গিয়ার বক্সের সমস্যা চিহ্নিত করে নিয়মিত তেল পরিবর্তন, ক্লাচের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, সময়মতো মেরামত এবং অতিরিক্ত ওজন এড়ানো গাড়ির গিয়ার বক্সের আয়ু বাড়ায় এবং গাড়ি চালানোর স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখে, গিয়ার বক্সের সমস্যা উপেক্ষা করা মানে ভবিষ্যতে বড় খরচের সম্ভাবনা তৈরি করা। তাই সমস্যা বুঝলেই দ্রুত দক্ষ মেকানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে যথাযথ মেরামত করানো সবচেয়ে ভালো উপায়, আপনার গাড়ির গিয়ার বক্স সুস্থ রাখুন, গাড়ি চালানোর সময় সুরক্ষিত থাকুন এবং যানবাহনের দীর্ঘস্থায়ী সেবা উপভোগ করুন।

আরও জানতে আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো করুন: R.S Driving Training Centre 2

আর. এস ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার ২ || দক্ষ ড্রাইভার তৈরিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মোবাইলঃ ০১৬৭৫-৫৬৫ ২২২ অফিস ঠিকানাঃ হাউজ-১৫৪/এ, রোড-০২, ব্লক-এ, সেকশন-১২, পল্লবী মিরপুর ঢাকা-১২১৬।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment

01675565222